কবির মাঝিদের দুঃখ দেখার কেউ নেই

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২১, ২১:৫০ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫৫

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

`১১টায় নৌকা লইয়া নামছি, দুপুর হইয়া গেছে ৮০ ট্যাহাও ইনকাম নাই। নৌকা ভাড়া দিমু কি, নিজে খামু কি‘- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ১৫বছর ধরে সদরঘাট এলাকায় নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করা কবির মিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে যাত্রী সংকটের কারণে সদরঘাটের পল্টুনের ছায়ায় নৌকা নিয়ে বিশ্রাম করছিলেন তিনি।

করোনার সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশজুড়ে সর্বাত্মক লকডাউনে অন্যসব জায়গার মতো বদলে গেছে সদরঘাটের বাদামতলী এলাকার চেহারা। নেই চিরচেনা ভিড়। দেশি-বিদেশি ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার এই বাদামতলীতে আগের মতো নেই গাড়ির জটলা।

বাদামতলী ঘাট থেকে জিঞ্জিরার আলম মার্কেটসহ নদীর ওপারের বেশ কয়েকটি ঘাটে তিনশর মতো নৌকা সবসময় চলাচল করত। কিন্তু লকডাউনের পর তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ যাত্রী পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে।

তাই কবির মাঝির মতো এই ঘাটে অনেক মাঝিকে দেখা গেছে নৌকায় শুয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। তাদেরও সবার কণ্ঠে অজানা আতঙ্কের সুর। কতদিন এভাবে চলবে, আবার কবে আগের মতো জমজমাট হবে খেয়াঘাট সেই হিসাব কষছেন এই মাঝিরা।

কীভাবে দিন কাটছে লকডাউনে এমন প্রশ্ন করতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কবির মিয়া জানতে চান- কেমন আছি একথা জাইনা কিছু করতে পারবেন? আমাগো খবর কেউ নেয় না। গত বছর লকডাউনে মাঝিরা কিছু না কিছু সাহায্য পাইছে, এবার কোনো খবর নাই।‘

লকডাউন শুরুর আগে আর এখন আয় কতটা কম হচ্ছে- জানতে চাইলে পাশ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সেলিম মিয়া বলেন, `খোরাকির পয়সাও হয় না। কেউ বিশ্বাস করবে কি না জানি না, পেট ভরে খাওয়ার পয়সা পাই না। এরমধ্যে নৌকা ভাড়া আছে একশ।‘

ভরদুপুরে যখন কথা হচ্ছিল তখন বাদামতলী ঘাটে ৩০টির মতো নৌকা যাত্রী পারাপার করছিল। বাকিদের কেউ এবারে কেউ জিঞ্জিরার ওপারে ঘাটে নৌঙর করা ছিল।

কবির মাঝি বলেন, `১১টায় নৌকা লইয়া নামছি, দুপুর হইয়া গেছে ৮০ট্যাহাও ইনকাম নাই। নৌকা ভাড়া দিমু কী, নিজে খামু কী? আগে দুপুরের মধ্যে কম হলেও আড়াইশ ট্যাহা ইনকাম করতাম।‘

প্রতিটি নৌকায় রিজার্ভ এপার থেকে ওপারে গেলে ভাড়া দিতে হয় ৩০ টাকা। আর জনপ্রতি ১০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি নৌকায় চারজন করে যাত্রী একসঙ্গে আনা-নেয়া করা হয়।

অবশ্য ঘাটের এপার থেকে ওপার আসতে প্রতিটি নৌকাকে নিজস্ব নিয়মে তৈরি করা সিরিয়াল মেনে চলাচল করতে হয়।

এসময় পাশ থেকে আরও কয়েকজন নৌকার মাঝি আক্ষেপ করে বলেন, যাতে লকডাউনে যাত্রী কম হওয়ায় আয় কমে গেছে তাই কোনো ধরনের সহযোগিতা দেয়া হলেও যেন তাদের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয় কর্তৃপক্ষ।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/বিইউ/জেবি)