ভিন্ন চেহারার সদরঘাট, শ্রমিকদের মাথায় হাত

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৩৯ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪৫

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

ভোররাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা আকারের বিলাসবহুল লঞ্চ সাইরেন বাজিয়ে ঘাটে ভিড়ত। কোনোটি আবার সাইরেন বাজিয়ে গন্তব্যে ছুটত। দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলার নৌপথে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছুটে আসতেন ঢাকার সদরঘাটের এই নৌবন্দরে। ফলে উৎসব-পার্বণ ছাড়াও এখানে সবসময় থাকত মানুষের কোলাহল। কিন্তু মহামারি করোনা রুখতে চলমান লকডাউন বদলে দিয়েছে সেই চিরচেনা চেহারা। সদরঘাটে ঢুকলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। কারণ স্বাভাবিক অবস্থায় সদরঘাটে এমন সুনসার নীরবতা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনে বদলে গেছে সদরঘাটের চেহারা। থমকে গেছে এখানকার হকার-শ্রমিক থেকে শুরু করে ছিন্নমূল মানুষের আয়ের পথ। ফলে খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে জীবন চলছে তাদের।

ঘুরে দেখা গেছে, মূল পল্টুন পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু করে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পুরোপুরি ফাঁকা।

এই ঘাট থেকে প্রতিদিন যেসব লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করত সেগুলো রাখা হয়েছে শ্যামবাজার থেকে শুরু করে পোস্তগোলার দিকে। অনেক লঞ্চ আশপাশের ডকইয়ার্ডে তুলে রাখা হয়েছে। কোনোটার মেরামতের কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে পশ্চিম দিকে বাদামতলী এলাকায় বেশ কিছু ছোট লঞ্চ নোঙর করে রাখতে দেখা গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরকারের নতুন নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ফলে সদরঘাটে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সদরঘাট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নৌপথের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও নৌপুলিশকে বেশ তৎপর দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পরপর নৌপুলিশকে নিজস্ব বাহনে করে বুড়িগঙ্গায় টহল দিতেও দেখা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাটে প্রবেশের টিকেট কাউন্টারগুলো সব বন্ধ। এমনকি ভেতরে প্রবেশের সব লোহার গেট তালাবদ্ধ রেখে পুলিশ ফাঁড়ির সামনের গেটটি শুধু খোলা রয়েছে। সেখানেও একজন আনসার সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ভেতরে যাওয়ার পর দেখা গেল, মূল পল্টুনের পূর্ব-পশ্চিম সবদিক পুরোটা ফাঁকা । পল্টুনের সঙ্গে একটি ইঞ্জিনবাহী নৌকা ও বিআইডব্লিইটিএর একটি মাঝারিমানের জাহাজ নোঙর করে রাখতে দেখা গেছে।

তিন নম্বর পল্টুন থেকে পূর্বদিকে তাকিয়ে দেখা গেছে, গ্লোরি অফ রাসেল, অ্যাডভেঞ্চার-৯ সহ বেশ কিছু লঞ্চ সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা।

সদরঘাট থেকে জিঞ্জিরার দিকে দেখা গেছে, অনেকগুলো লঞ্চ ডকইয়ার্ডে নোঙর করা। এই প্রান্তের লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর চলাচল করার কারণে অনেক সময় সামান্য ত্রুটি মেরামত করা হয় না। ফলে লকডাউনের সময় এবং ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই লঞ্চ মেরামত করে নিচ্ছেন। ফলে ডকইয়ার্ডগুলোতে কাজের চাপ বেড়েছে।

পল্টুনে দায়িত্ব পালন করা বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা সিডিউল অনুযায়ী ঘাটে ডিউটি করি। যাতে লোকজন না আসতে পারে। কোনো ধরনের সমস্যা যাতে না হয়। মাঝে মধ্যে কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি দেখে যান।

লঞ্চে মালামাল পরিবহনের জন্য যেসব শ্রমিকের হাঁকডাকে কাঁপত গোটা সদরঘাট তাদেরও তেমন একটা দেখা মেলেনি। ঘাটের আশপাশে বসে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককে।

আর ছিন্নমূল মানুষদের বেশি দেখা গেছে বাদামতলীর ঘাটের দিকে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব মানুষকে মাঝেমধ্যে খাবার পরিবেশন করা হয় বলে এই দিকে বেশি ভিড় তাদের।

ঘাটে শ্রমিকের কাজ করা রবিউল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘লঞ্চ চললে প্রতিদিন সর্দারদের দেয়ার পরও ভালো ইনকাম ছিল। এখন সব বন্ধ। অনেকের অন্য কোথাও যাওয়ারও সুযোগ নেই। তাই ঘাট বন্ধ থাকলেও আশপাশেই সবাই থাকতেছি।’

সামনের দিনের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই শ্রমিকের ভাষ্য, `এইরকম আয় বন্ধ থাকলে সামনে কেমনে চলবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।‘

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/বিইউ/জেবি)