রোজা না রাখার কাফফারার বিধান জেনে নিন

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৮ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৫

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

অসুস্থ বা পীড়িত, অতিশয় বৃদ্ধ, যাদের দৈহিক ভীষণ দুর্বলতার কারণে তাদের রোজা পালন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়। অন্যদিকে ভ্রমণকালীন সময়ে সিয়াম পালন করা কষ্টসাধ্য। তাই যারা রমজানে সুনির্দিষ্ট কারণে রোজা রাখতে পারছেন না তাদের জন্য ইসলামি শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। যেমন রোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদ্ইয়া ইত্যাদি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা (সিয়াম) যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ‘ফিদইয়া’—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে তবে বুঝতে সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে তবে পরে কাজা করতে হয়। এগুলো হচ্ছে-১. মুসাফির অবস্থায়। ২. রোগ বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে। ৩. গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে। ৪. এমন তৃষ্ণা বা ক্ষুধা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে। ৫. শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে। ৬. কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে। ৭. মেয়েদের হায়েজ-নেফাসকালীন সময় রোজা ভঙ্গ করা যায়। আর যেসব কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয় তা হলো, জেনেশুনে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। এমতাবস্থায় কাজা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয়।

মনে রাখবেন, শরিয়তে কঠোর নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তার অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে। ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজাই রাখতে হবে, মাঝে কোনো একটি রোজা ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খানা দেবে। অপর দিকে অসুস্থতাজনিত কারণে কারও রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেট ভরে খানা খাওয়াতে হবে। ৩. গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।

রোজার ফিদইয়া: রোজা রাখা দুঃসাধ্য হলে একটা রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে অন্নদান করা কর্তব্য। শরিয়ত মোতাবেক রোজা রাখার সামর্থ্যহীন হলে প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে ‘সাদাকাতুল ফিতর’-এর সমপরিমাণ গম বা তার মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদইয়া’ তথা বিনিময় বা মুক্তিপণ। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুতর রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, যার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই অথবা রোজা রাখলে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে, তারা রোজার বদলে ফিদইয়া আদায় করবে। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি যদি সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো শক্তি ও সাহস পায়, তাহলে তার আগের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তখন আগে আদায়কৃত ফিদইয়া সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।

অসুস্থ ব্যক্তি ফিদইয়া বা মুক্তিপণ আদায় না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদইয়া আদায় করা কর্তব্য; যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে যায়। অন্যথায় আদায় করা মুস্তাহাব। উল্লেখ্য যে প্রতিটি রোজার ফিদইয়া হলো একটি সাদাকাতুল ফিতর অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা বা তার সমমূল্য ৬৬ টাকা দরিদ্র এতিম বা মিসকিনকে দান করা অথবা একজন ফকির বা গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো। অনেক জায়গায় দেখা যায়, গরিব লোক কোনো ধনীর বদলি রোজা পালন করে দিচ্ছে। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই একজনের রোজা অন্যজন বদলি হিসেবে পালন করতে পারবে না। কেউ কারও রোজা বদলি হিসেবে রাখলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা শুদ্ধ হবে না। রোজার ফিদইয়া গুনাহমাফির মাধ্যমে মানুষকে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এজেড)