এখন মইরা গেলে কাফন কেনার মতো টাকা নাই

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৫৩ | প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২২

তপ্ত দুপুরে কাঠের বসা ঠেলাগাড়িতে বসে আছেন সেলিম মিয়া। তার সহযোগী তাকে ঠেলে ঠেলে বিভিন্ন দোকানের সামনে যাচ্ছেন এবং ডেকে ডেকে হাত পাতছেন। দৃশ্যটি মিরপুরের কাজীপাড়ার। মহামারি করোনাকালে সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনে কেমন আছেন তারা। কেমন চলছে তাদের জীবন। কথা বলে জানা যায়-

দিনাজপুরের অসহায় পঙ্গু সেলিম। অনেক বছর হলো পেটের টানে ঢাকায় আসেন ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালাতে। মিরপুরের এক নম্বরে মাসিক দুই হাজার টাকার বিনিময়ে টিনশেডের একটি রুমে থাকেন। জীবন সঙ্গী তার ভাগ্যে জোটেনি। কারণ পঙ্গুত্ব। একাই জীবনের ৫৫টা বছর পার করছেন কাঠের ঠেলাগাড়িতে অন্যের সাহায্যে ভর করে। কখনো তিনচাকা বিশিষ্ট মাটিতে ভরদিয়ে বসে চলা ঠেলাগাড়িতে।

করোনাকালে লকডাউনে কী রকম দিনানিপাত করছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আল্লাহ যেভাবেই চালাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ্‌। সকালে বের হই আর সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরি। সংসার, বউ, ছেলে-মেয়ের চিন্তা নেই। আমার তো আর অন্য কারো চিন্তা করতে হয় না। চেয়ে চিনতে খাই। লকডাউন দিছে সরকার। আগের চেয়ে আয় ইনকাম কমে গেছে। তাতে দুঃখ নেই। চলে যাচ্ছে। তয় কিনে খাইতে গেলে এখন খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তয় চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

চোখ থাকিতে কপাল মন্দ, আল্লায় আমার করছে অন্ধ, মাগো তোমার দরজায়ম, আমি এক গরীব অসহায়... এভাবেই সুর করে গেয়ে গেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেছেন জন্ম অন্ধ নবী।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নবী হোসেন জন্ম অন্ধ। ঢাকাতে মানিকদিয়ার আমতলা ক্যান্টনমেন্টে থাকেন। স্ত্রী ও দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে নবী হোসেনের সংসার। তার মতো বড় মেয়েও অন্ধ। বিয়েদারি হয়ে গেছে। ছোট মেয়েটাকে মাদ্রাসায় পড়ান। আর ছেলে দুইটা আরো ছোট। প্রতিদিন এভাবেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসা থেকে রিকসা করে আসেন আবার সারাদিন ভিক্ষা করে রিকসা করে বাড়ি ফিরে যান।

মাসিক সাত হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া বাসায় তাকে থাকতে হয় পরিবার নিয়ে। বর্তমানে আয় ইনকাম নিয়ে জানতে চাওয়ায় খুব আক্ষেপের সুরে বলেন, বাবা চোখে দেখি না। আমার একার উপার্জনে এই বড় সংসার চলে। সব খরচ চালাতে হয়। এখন খুবই কষ্ট হয়ে যাইতেছে। আরো রোজা রমজান মাস। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। খুব কষ্ট হইতেছে।

সাথে কথা যোগ করে বলেন, লকডাউন দেয়ায় আল্লাহর গজব বাড়ছে। এতো দিন কম মরছিল। এখন আরো বেশি করে মরছে। আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইড় বলে কথা আছে না। আল্লাহ নিলে মরে যাব। ডাক আসলেই চলে যেতে হবে। মাস্ক পরেননি কেন এমন কথায় তার জবাব দিলেন। আমি এই লকডাউন চাই না। আমার আগে বাঁচতে হইব। পেট কোনো কথা মানে না বাজান।

আর এখন আমার এমন অবস্থা। এখন মইরা গেলে দাফন কাফনের টাকা পর্যন্ত নাই। মানুষের কাজকাম না থাকলে, দুটাকা ইনকাম না থাকলে আমারে দিবে কোতথেকে? তবে অন্ধ নবী প্রতিদিন খোজ রাখেন প্রতিদিন কয়জন করোনায় মারা যাচ্ছে। বিগত এক সপ্তাহে প্রতিদিন কতজন করে মারা গেছেন অনায়েসে বলে দিলেন। তার শেষ কথা লকডাউন ক্ষতিকর।

আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের পাশেই থাকেন এক চোখ অন্ধ ও এক পা কাটা রংপুরের ফুলবানু। তিনিও টিনশেডের বাসায় মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। বাসায় গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি বাইরে থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয় বলে তিনি জানালেন।

সংসারে কে কে আছেন জানতে চাইলে বলেন, আমার স্বামী আছে অচল। ঘরেই পড়ে থাকে। আমার একার আয়েই সংসার চলে। কাছে থাকা শাড়ির আঁচলের পুটলি খুলে দেখালেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আয় হয়েছে এই কয়ডা টাকা। রোজা থেকে মিছে কথা কব না। আগারগাঁও থেকে মিরপুর দশ পর্যন্ত তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান।

তিন বছর আগে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ছোট মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে রাতে চোখে জ্বালা শুরু হয় এবং তারপর পরই চোখটা নষ্ট হয়ে যায়। আর এক পা দুই বছর আগে কেটে ফেলতে হয় রোগের কারণে। তার আগে ফুলবানু মানুষের বাড়িতে কাজ করে খেতেন বলে জানান। ফুলবানুরও শেষ কথা চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

এভাবে আরো অনেক ভিক্ষুকের সাথেই কথা বলে জানা যায় তাদের করুণ অবস্থার কথা। করোনার চলমান লকডাউনে ভালো নেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালানো মানুষ।

ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :