'বাংলা সংস্কৃতি ও বঙ্গবন্ধু'র অভিন্নতা ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম
| আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১২:৩২ | প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১২:২৫

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকীর হাত ধরে বাংলাদেশের বয়স যখন পঞ্চাশ বছর, তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে গিয়ে আমরা সেই পুরনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম একুশ সালের মার্চ মাসে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতির পিতার ছবি, ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে দেখলাম, আগুন জ্বালাতে দেখলাম, হাইওয়ে ফাঁড়িসহ থানা আক্রমণের দৃশ্যপট চোখে পড়ল। তার সঙ্গে ব্যাপকভাবে যে বিষয়টিকে মূল টার্গেট হিসেবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দেখলাম ঘুরেফিরে, তা ছিল বাঙালি সংস্কৃতির ওপরে খুব জোরেশোরে কশাঘাত করা। বিষয়টি নতুন নয়, তবে এবারের দৃশ্যমান মানসপটের বৈচিত্র্য খুব পরিষ্কারভাবে দেখা দিল। তা হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সাথে বাঙালি সংস্কৃতির যেসব শিকড় গ্রথিত রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছে।

অবশ্য তা নতুন করে গবেষণা করার প্রয়োজন নেই যে, পাকিস্তানি ভাবধারার মানসপট পুনরায় বাঙালিকে বুঝিয়ে দিল, কীভাবে বাঙালির ঘরে বসে খেয়ে-দেয়ে, বাঙালির টাকা-পয়সায় জীবন ধারণ করে, ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের নামে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, দীক্ষিত হচ্ছে। আর তা দিয়ে ঘুরেফিরে কীভাবে বাংলাদেশে নতুন করে পাকিস্তানি ভাবধারার সরকারকে ক্ষমতায় বসানো যাবে, তার একটি নতুন কৌশল প্রয়োগ করে তারা যে বাংলা সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, আজ তার ওপরই সবচেয়ে বেশি আঘাত করে যুদ্ধংদেহী মহড়া শেষ করল। এমনকি ভবিষ্যতে আরো কিছু অপেক্ষা করছে মর্মে প্রকাশ্য হুমকিও উচ্চারণ করতে দেখা গেল। সে কারণে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্রেসক্লাব, গণগ্রন্থাগার, এমনকি শিক্ষা বা বুদ্ধির চর্চার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব কেন্দ্র রয়েছে, সে জায়গাগুলোতে আঘাত হানতে বেশ ভালো করেই সক্ষমতা দেখিয়েছে তারা।

ঐতিহাসিক ঐতিহ্য নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ যেহেতু বাংলাদেশের জানমাল ও নাগরিক নিরাপত্তার দায়িত্বে সর্বদা নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন, যার সার্থক প্রমাণ দেখতে পেয়েছি আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকায়। যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে সাধারণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থ্রি নট থ্রি রাইফেল উঁচিয়ে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলা হয়েছিল পাকিস্তানের সাঁজোয়া সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫-এর ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহের ভাষণে তার যথার্থ স্বীকৃতি দেন এই বলে- "আজ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। যত দিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, যত দিন বাংলার মানুষ থাকবে, তত দিন এই রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।" কাজেই বাংলাদেশ পুলিশও সে কারণেই গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান টার্গেট।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের বয়স পঞ্চাশ বছর হলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, তাদের নিজেদের ভাষায় এখনো ধর্মচর্চা করার মতো জ্ঞান-গরিমায় দীক্ষিত হতে পারেনি। এই সব তথাকথিত ধর্মদখলি মানুষেরা শুরু থেকেই কূটকৌশল প্রয়োগ করে আসছে খুব চতুরতার সঙ্গে। নিজ ভাষায় ধর্মচর্চা করার সুযোগ থাকলে মানুষ তার সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে, ধর্মের মূল বিষয়বস্তুগুলো যত সহজে অনুধাবন, অনুসরণ ও অনুকরণ করতে পারত, সেই জায়গা থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে খুব কৌশলে। বাংলাদেশের এই শ্রেণির মানুষ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি বা গোত্র বড় করার প্রয়োজনে এবং ব্যবসায়িকভাবে অর্থ-বৃত্তের একটি বাজার তৈরি করার মানসিকতায় তারা এই পন্থাকে নিজেদের করায়ত্তে রেখেছেন।

বলা প্রাসঙ্গিক যে, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের জন্মের ক্ষেত্রে কোনো বিবেচনাতেই ধর্ম নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ছিল না। তাদের মনোভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুত্বের হাত না বাড়ালে হয়তো তাদের স্বপ্নই বাস্তবতা লাভ করত এমনটাই তারা বিশ্বাস করে। শুধু তাই নয়, এ ভ্রান্ত বিশ্বাসকে কচিকাঁচাদের মনস্তত্বে বেশ পাকাপোক্ত করেই ঢুকিয়ে দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিকভাবে। কাজেই ভালো-মন্দ সব ক্ষেত্রেই ভারতবিরোধিতা তাদের ধর্মের অংশবিশেষ হিসেবে রক্ত-মাংসে মিশে থাকার সুবাদে নির্বিচারে সবাইকেই তারা এ শিক্ষা প্রদানে অনেক বেশি সফল হয়েছে। বাঙালির ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে, সর্বসাধারণের ঘরে এ শিক্ষা তারা দিয়ে আসছে বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে।

স্মরণীয় যে, বাংলাদেশ জন্মের প্রাক্কালে এবং আরেকটু পিছনে ফিরে গেলে, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এদেশের একটি বিশেষ গোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে যেমন করে মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে অনাগ্রহ দেখিয়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের ভাষাযুদ্ধে বৈরিতা করেছে, তেমনি করে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এদেশের একাংশ মানুষ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।

সৃষ্টিকর্তার মহান আশীর্বাদে বাংলার মানুষ সৌভাগ্যবান বলেই বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ক্যারিশমাটিক নেতার জন্ম হয়েছিল এদেশে। বিধায়, সাংস্কৃতিকভাবে প্রস্তুত বাংলাদেশের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করতে পেরেছিলেন, একই আত্মায় একীভূত করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। তাই যার যা যা করণীয় তার সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বাঙালির মধ্যে যে শক্তি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই শক্তির সঙ্গে হাজার বছরের বাঙালি-সংস্কৃতির যে প্রচণ্ড শক্তি, একীভূত হয়ে প্রেরণা জুগিয়ে বাঙালি যোদ্ধাদের মধ্যে যে প্রাণের গতিশক্তি সঞ্চার করেছিল, সেই শক্তির কাছে বিশ্বের আলোচিত রেজিমেন্টাল পাকিস্তানি সামরিক শক্তি পরাজয়বরণ করল। আমরা মাত্র ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নামক নতুন দেশকে বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত করতে সক্ষম হলাম।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর থেকেই ভাষা আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫-এর জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা, তৎপরবর্তী ইতিহাস বিকৃতি করা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত এমনকি ক্ষমতা গ্রহণের পরও তাকে বারবার হত্যাচেষ্টা, মাঝখানে আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তির হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে নিজেদের বিভিন্নভাবে হৃষ্টপুষ্ট করা, বাংলাদেশের পতাকা গাড়িতে ব্যবহার করে মন্ত্রিত্ব লাভ করা, এমনকি বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে এবং গোপনে হত্যাচেষ্টা, সারা দেশে একসঙ্গে বোমাবাজি করা, রমনার বটমূলে বোমাবাজি করে মানুষ মেরে ফেলা, জ্বালাও-পোড়াও করা, সিনেমা হলগুলোতে বোমাবাজি করে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা তথা বাঙালি সংস্কৃতিকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মুছে দেওয়ার সংকল্প বাস্তবায়ন করতে দেখেছি স্বাধীনতাবিরোধী, বাংলা সংস্কৃতিবিরোধী চিহ্নিত এ গোষ্ঠীকে।

৫ মে হেফাজতের মতিঝিল তাণ্ডব, ২০১৩-১৪ তে জ্বালাও-পোড়াওয়ের বীভৎসতা আর সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, আবক্ষ ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা, ছবি পুড়িয়ে দেওয়া এই গোষ্ঠী এদেশের মানুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এদেশের সব সুবিধা ভোগ করলেও তারা কেউ বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন না। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম রাজনৈতিক দর্শন সব জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণের সহাবস্থান নীতিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তাদের কাছে শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় অপছন্দেরও বটে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা সরকারবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবেই এদের আত্মপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের শোক তারা আজও কাটিয়ে উঠতে না পেরে বরং দিনে দিনে বিভিন্নভাবে ক্ষমতাশ্রয়ী হয়ে অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে প্রকৃত বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আঘাত হেনে চলেছে।

জেনে রাখা দরকার, যারা নিজস্ব লোকজ আধার ও প্রকৃতি থেকে নির্বাচিত জ্ঞান ও নির্যাসিত বোধ অর্জন করে তা কর্ষণ ও বিকশিত করার মধ্য দিয়ে প্রগতির চেতনা অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবোধের চেতনাই প্রকৃত জাতীয়তাবাদ। যার বহিঃপ্রকাশ অভিব্যক্তির সবটুকুর মধ্যে স্বদেশ অঙ্গের ভাবধারায় প্রচলিত শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-গরিমা, শিল্প-সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির স্বকীয়তা বিদ্যমান। এই চর্চার প্রগতিশীলতা কল্যাণমুখী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করে। এমন কল্যাণমুখী প্রগতিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় বাংলার আপামর জনগণের হৃদয়কে জয় করেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশের জন্ম দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সুযোগ পেলেই আক্রমণের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহ আর বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাস্কর্য। এমনকি তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও টার্গেট করে অসংখ্যবার হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে এরা সবাই মিলে।

শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-গরিমায় আরব সমাজ যখন পিছিয়ে ছিল তখন সে ভূখণ্ডে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিশ্বমানবের দিকপাল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যিনি মুসলিম সমাজের শেষ নবী হিসেবে সমস্ত পৃথিবীতে মহাসম্মানী একজন মহামানব। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আরবে তখন আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগ চলছিল। তখনকার মানুষের আচরণে বর্বরতার চরম সীমা প্রত্যক্ষ করেছেন নবী করিম (সা.)। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর সাধনায় মানুষকে ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-গরিমার উপলব্ধিতে তিনি বিদ্যা অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাওয়ার কথা বলেছেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে অনেকেই সেই শান্তির ধর্মকে আশ্রয় করে এমন কিছু ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড আমাদের প্রত্যক্ষ করালেন, কখনো কখনো বর্বরতাকেও তা হার মানাচ্ছে। এরা দেশের মা, মাটি, মানুষকে বিশ্বাস করে না, এরা বিভিন্ন গানের সুর রপ্ত করে বিভিন্ন বয়ানে ব্যবহার করলেও বাংলা সংস্কৃতিতে তাদের বিচরণ নেই বললেই চলে। বাংলা আর বাঙালি শব্দ দুটোই তাদের কাছে খুব অপছন্দের। নিদারুণ অনীহা প্রদর্শিত হয় তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে। এদেশের বাঙালির জীবনযাত্রার স্টাইল, ফ্যাশন, বিদ্যাচর্চা, কবিতা, নাটক, গান সব কিছুতেই তাদের অপছন্দ, অনীহা এমনকি এগুলোকে স্তব্ধ করতে, রুখে দিতে হেন কোনো কাজ নেই যা তারা করে না।

যুগের সভ্যতাকে স্বীকার করে নিয়ে তাদের চরমপন্থী, উগ্রবাদী 'বাংলাবিরোধী অবাঙালি' হিসেবে আখ্যায়িত করাটাই অধিকতর সমীচীন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে বিস্মিত হই মনের অভ্যন্তরে লুকায়িত মিথ্যাচারে আবৃত্ত হয়ে প্রকাশভঙ্গিতে যখন বলে থাকেন তারা অরাজনৈতিক কিন্তু কর্মকাণ্ডের সবটুকুতেই অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ক্ষমতালিপ্সুতা উভয়ই স্পষ্টত বেশ চোখে পড়ে।

হাজার বছর ধরে কর্ষিত হয়ে বাংলাপ্রাণের মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আমরা যখন বাঙালি সংস্কৃতিকে নিজেদের করে পেলাম তখন তারা এটাকে বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার-প্রসারে মরিয়া হয়ে উঠলেন। অবশ্য এ ধারাবাহিকতা সমমনা অগ্রজ পাকিস্তানিদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বঙ্গবন্ধুকে রোহিত করতে গিয়ে যখন শুধুমাত্র জেল-জুলুমের অত্যাচার যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সঙ্গে কূটকৌশলে তদানীন্তন পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা রবীন্দ্র সাহিত্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তখনো ধুয়া উঠেছিল এ জাতীয় সাহিত্য ভারতীয় সংস্কৃতি লালন করে। অথচ কদিন আগেও যারা সর্বভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই সুদীর্ঘকাল পরিচয় বহন করে এসেছে। আমাদের দেশের এই গোত্রীয় মানুষের চেতনা ঠিক একই পথ অনুসরণ করে আসছে এবং এখনও তা করছে যখন দেখি 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' বাংলা সংস্কৃতির প্রাণভ্রমরা জাতীয় সংগীতকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষ উচ্চারণ করে থাকেন।

সরকার, সরকারি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সংস্কৃতির যেকোনো শাখার সবাইকে এখনই সংস্কৃতি রক্ষা, অবাধ সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে সমানুপাতের হার অপেক্ষা অধিক সংখ্যক প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রসারণ তথা সংস্কৃতিভিত্তিক পৃথক স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং তা সঠিকভাবে বিকশিত করার বাস্তবমুখী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো ক্ষেত্রবিশেষ সংকুচিত করার পরিবর্তে তা প্রসারিত করার দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানানো জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষ ঝুঁকি মোকাবেলা করার বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণও করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় আগের মতো ছোট আকারের অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে এবং সমাজের এই কর্মীদের আত্মবিশ্বাসী করতে প্রশাসনিক অনুমতি জাতীয় আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতার আওতামুক্ত করা দরকার। বাংলা সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় প্রশাসনিক অনুমতির বিষয়টা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বিশেষ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা অনুভব করলে সেক্ষেত্রে বিষয়টা বিবেচনায় নেয়াটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে অন্যথায় বাংলাদেশে বাস করে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার জন্য পৃথক অনুমতি নিতে হবে তা কেন! এ অবস্থা চলতে থাকলে যা দেখছি ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহতা চোখে পড়লে অবাক কিংবা বিস্মিত হবার কোনো কারণ থাকবে না। সাংস্কৃতিক জাগরণ সমাজে দৃশ্যমান করা আশু প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়িক প্রসারতাই কেবল পারে সাম্প্রদায়িক পশুত্বকে দমন করতে।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :