শাইখুল হাদিসের সন্তানেরা কে কে রাজনীতিতে?

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩৯ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৪:০২

কাজী রফিক

হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর সাত দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আলোচিত এই ধর্মীয় নেতার বাবা হলেন শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। তিনি হাদিস বিশারদ হিসেবে পরিচিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। তার গড়া দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মামুনুল হক। এছাড়া আলোচিত এই হেফাজত নেতার অন্য ভাইয়েরাও আছেন দলটির সঙ্গে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাইখুল হাদিসের পাঁচ ছেলে এবং আট মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে মোটামুটি চারজনই খেলাফত মজলিসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মেয়েরা সরাসরি জড়িত না থাকলেও তাদের ছেলেরা আছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল।

সূত্র জানায়, শাইখুল হাদিসের বড় ছেলে হাফেজ মাহমুদুল হক। তিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চকবাজারে তার একটি ইসলামি বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া তিনি হজ ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। তিনি এক সময় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বিভিন্ন পদে ছিলেন। তবে এখন পদে না থাকলেও নীতি-নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখেন। সবার বড় হিসেবে পরিবারে ও দলে তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

শাইখুল হাদিসের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা মাহবুবুল হক। তিনি বাবার প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়ার শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। শাইখুল হাদিসের জীবদ্দশায় তিনি তার বাবার অঘোষিত পিএস হিসেবে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে জানা যায়। তবে এখন দলে তার তেমন কোনো প্রভাব নেই।

তৃতীয় ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি শাইখুল হাদিসের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল। হেফাজতে ইসলামের সহসভাপতি এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব। তিনি কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ছিলেন। তবে অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বেফাকের মহাসচিব হওয়ার পর শর্তের কারণে ছোটভাই মামুনুল হককে এই পদ দিয়ে তিনি দল থেকে বাহ্যত বিদায় নেন। জানা গেছে, পদে না থাকলেও দলের নীতি-নির্ধারকদের একজন তিনি।

শাইখুল হাদিসের চতুর্থ ছেলে মাওলানা মামুনুল হক। তিনি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগরী শাখার মহাসচিব। তিনি কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিজেদের প্রতিষ্ঠিত খেলাফত যুব মজলিসেরও তিনি সভাপতি। জামিয়া রাহমানিয়ার একজন মুহাদ্দিস তিনি। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে তার অস্বাভাবিক কদর বেড়েছে। উত্তেজনাকর বক্তব্যের জন্য তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী বলয়ের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

শাইখুল হাদিসের পঞ্চম ছেলে মাওলানা মাসরুরুল হক। তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে জড়িত নন।

তবে শাইখুল হাদিসের দৌহিত্রদের মধ্যে মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা হাসানসহ বেশ কয়েকজন তাদের নানার দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রাজনীতিতে আলোচিত হন আশির দশকে। মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম শীর্ষ নেতা। তবে হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর নতুন দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গঠিত হয়। সেই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে লংমার্চ করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন শাইখুল হাদিস। ২০০০ সালের দিকে তিনি তার নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট চারদলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি কারারুদ্ধ হন।  ওই বছরের শেষে দিকে নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে। তবে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা ইস্যুতে পরবর্তী সময়ে ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙে যায়। এমনকি ২০০৫ সালে শাইখুল হাদিসের দলও ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যায়। একটি ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’ আরেকটি শুধু ‘খেলাফত মজলিস’ নামে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়।

চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে এসে বিএনপির সঙ্গে শাইখুল হাদিসের দূরত্ব তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে পাঁচ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল শাইখুল হাদিসের আজিমপুরের বাসায় গিয়ে লিখিত চুক্তিও করেন। তবে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের কারণে সেই জোট আর বেশিদূর এগোয়নি।

২০১২ সালে শাইখুল হাদিসের ইন্তেকালের পর থেকে দলের হাল ধরছেন তার ছেলেরা। দলীয় প্রধান পদে এই পরিবারের কেউ না থাকলেও মহাসচিবসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে তাদের দখলে। মূলত শাইখুল হাদিসের পরিবারই নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামক দলটি।

 

(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/কারই/জেবি)