ধরিত্রী দিবসের কথা

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০১

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

ধরিত্রী শব্দটি এসেছে ধরনী বা ধরা থেকে। যার অর্থ হলো পৃথিবী। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সর্বসম্মতভাবে ধার্য করা একটি দিবস হলো বিশ্ব ধরিত্রী দিবস।

১৯৬৯ সালে সানফ্রান্সিস্কোতে ইউনোস্কো সম্মেলনে শান্তিকর্মী জন ম্যাককনেল পৃথিবী নামক মায়ের সম্মানে একটি দিন উৎসর্গ করতে প্রস্তাব করেন এবং উত্তর গোলার্ধে বসন্তের প্রথম দিন হিসাবে ১৯৭০ সালের ২১ মার্চ প্রথম এই দিনটা উদযাপিত হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই দিনই পরে একটা পরিঘোষণায় অনুমোদিত হয়। একমাস পর একটা পরিবেশগত শিক্ষামূলক দিন হিসাবে একটা আলাদা ধরিত্রী দিবসের অবতারণা কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর গেলর্ড নেলসন, যেটা প্রথম সংঘঠিত হয় ২২ এপ্রিল ১৯৭০ সালে।

ধরিত্রী দিবসের ২০ বছর পূর্তিতে ১৯৯০ সালে আরেকটি বড় আন্দোলন শুরু হয়। ওই বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ কোটি মানুষ ধরিত্রী দিবস পালন করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সিনেট নেলসনকে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব “প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম” ভূষিত করেন। বর্তমানে আর্থডে নেটওয়ার্ক কর্তৃক বিশ্বব্যাপী সমন্বিত ভাবে পালিত হয় দিবসটি। ১৯৩টির অধিক দেশে প্রতিবছর এই দিবস পালন করা হয়।

১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনেও ধরিত্রী দিবস প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। নতুন শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ধরিত্রী দিবসে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়। সে বছর প্রায় ৫০০০ পরিবেশবাদী সংগঠন ১৮৪টি দেশে কাজ করেন ধরিত্রী দিবসকে সফল করার জন্য।

২০০৯ সালে কোপেন হেগেনে বিশ্বের রাষ্ট্র নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি সর্বজনীন চুক্তি সই করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ২০১০ সালের ধরিত্রী দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সে বছর ধরিত্রী দিবসে যুক্তরাষ্ট্রে ২,৫০,০০০ মানুষ নিয়ে একটি বড় সমাবেশ হয়। তাছাড়া অ ইরষষরড়হ অপঃং ড়ভ এৎববহ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করা হয়। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসকরণ, প্লাস্টিক দূষন বন্ধ করা, মাংস কম খাওয়া প্রভ‚তি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ক্যাম্পেইনটিতে বর্তমানে ২ বিলিয়নের অধিক কার্যক্রম লিপিবদ্ধ রয়েছে।

গত বছরের ন্যায় এ বছরও এমন সময় ধরিত্রী দিবস পালন হচ্ছে, যখন পৃথিবী ঈড়ারফ-১৯ এর করাল গ্রাসে আবারও বিপর্যস্ত। পুরো বিশ্বই ভাইরাসের কারনে থমকে আছে। যদিও এ ভাইরাসের প্রভাবে কল-কারখানা বন্ধ থাকা এবং লকডাউনে পরিস্থিতিতে বিশ্বে দূষন অনেকটা কমেছে। ধরিত্রীকে যত্ন নেয়ার জন্য আমাদের করনীয় পদক্ষেপঃ

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সকল মানুষকে পরিবেশ সচেতন করে তুলতে হবে।

বৃক্ষ কর্তন রোধ, বৃক্ষরোপন ও বনসৃজনের দিকে নজর দিতে হবে।

দুরবর্তী স্থানে যাবার জন্য ব্যক্তিগাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিক যান বহন ব্যবহার করা।

কাছাকাছি পথ অতিক্রম করতে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা।

জীবাস্ম জ্বালানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে।

জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষনের দিকে সকল মানব জাতিকে নজর দিতে হবে।

রি-সাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার করতে হবে।

পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন গবেষণা মূলক কাজে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

প্রকৃতি আসলে নিজের শূন্যস্থান নিজেই পূরণ করে নেয়, কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ধরিত্রীকে অর্থাৎ প্রকৃতিকে আমরা আমাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধ্বংসের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পরিবেশ এবং প্রকৃতি সংরক্ষনবিদগণের আবেদন নিবেদনে কেউ কর্ণপাত করেনি। কিন্তু সময় এসেছে ধরিত্রীকে বাঁচানোর। না হলে প্রকৃতি ঠিকই তার রুপ পরিবর্তন করবে।

লেখক: কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ এবং মিডিয়া সেল সমন্বয়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ, ঢাকা।