হেফাজতই প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছে: ফখরুল

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৩ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বিএনপি নয়, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারই সম্পৃক্ত’ বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘হেফাজতই প্রধানমন্ত্রীকে কওমি মাতা হিসেবে উপাধি দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা (সরকার) ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ২৬ মার্চের পর থেকে গত কয়েক দিনে বোধহয় কয়েক হাজার গ্রেপ্তার করে ফেলেছে এবং শুনলে অবাক হবেন আমাদের চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষবাড়ীয়া, ঢাকায় দলের (বিএনপি) কর্মীরা তারা রাতে বাসায় থাকতে পারে না। ব্লক রেইড করছে, কেরানীগঞ্জে ব্লক রেইড করে আমাদের নেতা-কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলে যে, হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। আরে হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তো আপনারা। আপনারা বসে, প্রধানমন্ত্রীর বাসায় বসে মিটিং করে তাদের (হেফাজতে ইসলাম) সঙ্গে চুক্তি করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে কওমি মাতা হিসেবে উপাধী দেয়া হয়েছে। আমরা হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলাম না আপনারা?’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ‘করানো মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো সরাসরি বলে ফেলেন, এতো কোটি টাকা দিয়েছি, আমরাই একমাত্র কাজ করছি। আর তো কেউ কাজ করছে না- এসব কথা বলেন। দায়িত্ব তো আপনারাই নিয়েছেন। দায়িত্ব তো পালন করতে হবে আপনাদেরকেই। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনারা প্রতি পদে পদে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আপনারা জনগণের সমস্ত আস্থা হারিয়েছেন, বিশ্বাস হারিয়েছেন। এখন অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছেন। এই দেশটাকে একটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।’

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বাম সংগঠন এবং হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে যেকোনো সংগঠনের, যেকোনো রাজনৈতিক দলের যেকোনো প্রতিবাদ করা তো তাদের অধিকার। এটা তার সংবিধান সম্মত অধিকার। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন অথচ কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবেন না, আপনি কাউকে কথা বলতে দেবেন না, অন্যায়গুলোকে তুলে ধরতে দেবেন না, ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে দেবেন না। তাহলে কীভাবে একটা সরকার চলতে পারে। যেটা তো আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না।’

একাদশ সংসদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আপনাদের একটা আছে সেই পার্লামেন্টে আপনাদের লোকজন সব বসে আছে, আপনারাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন কারা কারা পার্লামেন্ট সদস্য হবেন, কারা কারা হবেন না এবং সেই পার্লামেন্টে যা খুশি তাই আপনারা করছেন। একটা দিনও শুনিনি আমি যে, করোনা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, একটা দিনও শুনিনি যে, সেখানে জনগণের আর্থিক অবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে। সেখানে শুধু বন্ধনা, বন্ধনা আর বন্ধনার স্তুতি আমি শুনেছি। আজকে সমস্ত দেশে একটা ত্রুটির মহোৎসব চলছে।’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনায় এখন আমাদের আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই। ভ্যাকসিন প্রথম বার যারা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয়বার সবাই ভ্যাকসিন পাবেন কি না তা আমি জানি না। কারণ যা শুনতে পাচ্ছি যে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। একজন কিছুদিন আগে বলেছেন যে, একটা মাত্র দেশের উপরে এই যে নির্ভর করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা-এটাও তো একটা ক্রিমিনাল ওফেন্স। আপনাকে একটা সরকার চালাতে হলে অনেক পথ খোলা রাখতে হবে। আপনি চীনকে বলে দিলেন যে, না তোমার এটা আমার দরকার নেই, ফেরত দিয়ে দিলেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে নেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনেক বেশি দামে তাও ব্যাক্তি মালিকানায় একজন ব্যবসায়ীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তার কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন আপনি নিচ্ছেন। এটা গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট নেয়া যেতো। অন্যান্য দেশগুলো নিচ্ছে।’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘একটি পথ বের করার’ আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা সমস্যা মোকাবিলা জনগণের নিয়ে করতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এটা করার কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশিদের আহ্বান জানাচ্ছি অথচ  দেশের ভেতরে আমরা জাতীয় ঐক্য করছি না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের অংশীদারিত্ব ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব না। সরকারকে বলব, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন।’

এতে জেএসডির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন কার্য্করী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। 

আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও ফারাহ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) সম্পাদক  বদিউল আলম মজমুদার, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি মো.সিরাজ মিয়া, আকম আনিসুর রহমান খান কামাল, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার, সহসভাপতি তৌহিদুল হোসেন বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/বিইউ/জেবি)