অবাধে চলছে সরকারি শালবন দখল

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩৬

আশিকুর রহমান, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ক্ষমতাসীন ভূমিদস্যু ও দালালদের হাত ধরে দখল হচ্ছে সরকারি শালবনের জমি। গত এক মাসে একই রেঞ্জের মৌচাক বিট অফিসের আওতাধীন উত্তর মৌচাক, ভান্নারা, রাখালিয়াচালাসহ আরও কয়েকটি স্থানে শালবনের জমি জবরদখল করে দশটিরও বেশি স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দখলদারদের সঙ্গে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই দখল হচ্ছে শালবনের জমি। জমি উদ্ধারে এবং দখল ঠেকাতে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, কালিয়াকৈর রেঞ্জের আওতাধীন চন্দ্রা বন বিট, মৌচাক বিট, বোয়ালী বিটের বিভিন্ন স্থানে সরকারি শালবনের জমি দখল করে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন, ঘড়বাড়ী, দোকানপাট। নিয়মনীতি না মেনে বনের সীমানা ঘেষেও নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। বনের আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের পাশে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে বন বিভাগ থেকে অনুমতি ও জমির সীমানা নির্ধারণের নিয়ম থাকলেও তার কোনটি মানা হচ্ছে না। শুধু স্থানীয় লোকজন নয় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মিল কারখানা ও ঝুট গুদামের দখলেও চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বনের জমি। রাতের আঁধারে সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে ওই সব মিল কারখানার যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি উপজেলার চন্দ্রা বন বিটের আওতাধীন কালামপুর এলাকার আলোচিত পার্ক সোহাগ পল্লীর মালিক বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধেও বনের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালামপুর এলাকায় তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তির পাশাপাশি দুই পাশের কিছু বনের জমি দখল ও বনের গাছ কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে মামলা করেও দখল ঠেকাতে পারেননি বন বিভাগ।

এদিকে, বনের গাছ কেটে তৈরি করা রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হলেও পুনরায় আবার দখলে চলে গেছে জমিগুলো। এছাড়াও একই বিটের আওতাধীন পল্লীবিদ্যুৎ সরকারবাড়ী এলাকা, বোর্ডমিল এলাকা, মাটিকাটা রেল লাইন এলাকা, বক্তারপুর এলাকায় একযোগে বনের জমি জবরদখল করে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক স্থানে আবার সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে বড় বড় স্থাপনা। স্থানীয় কিছু অসাধু বন দালালদের সহযোগিতায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে জমি দখল নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করছে স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় সড়কের পাশের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি ঝুট ব্যবসায়ীদের জবর দখলে রয়েছে। শালবন পুড়িয়ে জমি দখল করে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন ঝুট ব্যবসায়ীরা।

মৌচাক বিট কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান মানিক জানান, যারা বনের জমি জবর দখলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সঙ্গে আমরা অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারিরা পেরে উঠি না। তাই দখলদারদের নামের তালিকা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এমনকি বনের জমিতে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে কালিয়াকৈর রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দোলন বলেন, সরকারি সংরক্ষিত বন বিভাগের জমি দখলের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন দখল ঠেকাতে আমরা সর্বক্ষণ সচেষ্ট রয়েছি।

গাজীপুর জেলা ফরেস্ট অফিসার (ডি.এফ.ও) ইউসুফ জানান, এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/পিএল)