সহিংসতার বিচার চেয়ে হেফাজত ছাড়লেন আব্দুর রহিম কাসেমী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২১

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের বিরোধিতা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী।

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এক লিখিত বিবৃতিতে পদত্যাগ করার বিষয়টি জানান হেফাজতের এই নেতা। সেখানে তিনি হেফাজতের নেতাকর্মীদের এমন আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে ইসলামবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সকালে সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হেফাজতের এই নেতার সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিক তিনি সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যটি জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠান।

আবদুর রহিম কাসেমী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ার জামিয়া ইলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষাসচিব। তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

লিখিত বিবৃতিতে আবদুর রহিম কাসেমী বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জেলার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় খেদমত করেছেন। তিনি সর্বশেষ মাদ্রাসায় শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে গত বছরের ১ ডিসেম্বর তাঁকে মাদ্রাসার সব দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং মাদ্রাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রীয় সফরকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলাম যে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে, তা নজিরবিহীন ও অমানবিক। দেশ ও জনগণের জানমালের যে ক্ষতি হয়, তা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। তাই ব্যক্তিগতভাবে তিনি এসব কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকেন। বর্তমানে নিজের পরিচালিত মাদ্রাসায় সব শিক্ষক ও ছাত্রকে এসব দেশ ও ইসলামবিরোধী কাজে যোগদান না করতে বাধ্য করেন।

আবদুর রহিম কাসেমী দাবি করেন, গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতি করা এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এসবে তিনি ও তাঁর মাদ্রাসা অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর নাম যুক্ত করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা নিতান্তই প্রতিহিংসামূলক মিথ্যাচার ও বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, হেফাজতের ইসলামের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি জড়িত না। তাদের সব ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমকে শরিয়তভাবে অবৈধ মনে করেন তিনি। পাশাপাশি যাঁদের প্ররোচনায় দেশ ও জনগণের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।

গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের জেরে সহিংসতা হয় চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

সেদিন এবং পরের দুই দিনও তাণ্ডব চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তারা শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সমাজসেবা কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে হামলা করে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলা তাণ্ডবের পর এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরইমধ্যে পদত্যাগের খবর দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজতের নেতা আব্দুর রহিম কাসেমী।

এর আগে হরতালে সহিংসতায় ক্ষুব্ধ হয়ে সংগঠটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল হেফাজতে ইসলামের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর আবার স্বপদে ফিরে আসেন। এরপর হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমিরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান।

ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :