ধসে যাওয়া রানা প্লাজার জায়গাটি এখন...
আজ ২৪ এপ্রিল। শুধু বাংলাদেশই নয় বরং মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক দিন। এদিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নিকটে সাভারে সাত তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে মারা গিয়েছিল ১১৩৬ জন শ্রমিক। না, ওরাতো মারা যায়নি! এসব শ্রমিকদের ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছিল।
আগের দিনই ভবনের তিনতলায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। তাই শ্রমিকরা ভবনের নিচে এসেও উঠতে রাজি হয়নি। তারা বলছিল ভবনে ঝুঁকি আছে। কিন্তু পাষণ্ড ভবন মালিক আর কারখানা মালিকরা জোর করে ভয় দেখিয়ে কাজে নামতে বাধ্য করে। কিন্তু কে জানতো এই কাজই তাদের শেষ কাজ। কে জানতো ওই দিন ভবনে প্রবেশের মূল্য দিতে হবে জীবন দিয়ে। শ্রমিকরা যখন কাজে ব্যস্ত তখনই ধসে পরে ভবনটি। পুরো ভবনটিতে তখন কর্মরত ছিল সাড়ে তিন হাজার নিরীহ শ্রমিক। নিমেষেই জীবিত মানুষগুলো হয়ে গেল লাশ। আহত হলো আরও দেড় হাজার। এখনো নিখোঁজ অনেকে।
রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্ণ হলো আজ। গতকাল শুক্রবার সকালে রানা প্লাজার সেই অভিশপ্ত জায়গাটি দেখতে যাই। দেখে বুঝার উপায় নেই আট বছর আগে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল সাত তলা সেই ভবনটি যা কেড়ে নেয় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ। আশপাশে ভবন থাকলেও এই জায়গাটি এখনো পরিত্যক্ত, কচুরিপানায় ভর্তি। দেখে মনে হবে পরিত্যক্ত কোন ডোবা বা পুকুর। আশপাশের ভবনগুলোর ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে স্থানটি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এই জায়গাটির সামনে নির্মিত হয়ে একটি শহীদ বেদী। শহীদ বেদীটিও পোশাক শ্রমিকদের মতোই অবহেলা অযত্নে দাড়িয়ে আছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনো যত্ন নেই এই শহীদ বেদীর। চারপাশে ময়লা পর আছে, জায়গায় জায়গায় ধরেছে ফাটল।
আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল বছরে একটি দিনই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বেদীতে ফুল দেওয়া হয়। তখনই কিছুটা যত্ন পায় এটি। তবে এবারের চিত্র একবারেই ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর তেমন কোন আয়োজন নেই।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক দাঁড়িয়ে আছে পোশাক শ্রমিকদের রক্ত আর ঘামের ওপর। অথচ তাদেরই কোনো মূল্য নেই মালিকদের কাছে। রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেল কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো বিভিন্ন সময় দেখা যায় বকেয়া বেতন বা নিজেদের ন্যায্য দাবি জানালেও নির্যাতিত হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। আর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা বাদই দিলাম। যেখানে বেঁচে থাকাই শেষ কথা সেখানে আবার নিরাপত্তা!
লেখক: সেকশন অফিসার, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র(সিআরপি), সাভার, ঢাকা।