করোনা দুর্যোগকালে জাকাত ব্যবস্থাপনা

ডক্টর তুহিন মালিক
| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৫:০১ | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৫৫

করোনা দুর্যোগের কারণে ফকির-মিসকিনের লিষ্টে নতুন করে চলে এসেছে অনেক নিম্ন মধ্যবিত্তদেরও নাম। এমনকি অনেক মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। তারা না পারছে জীবন চালাতে। না পারছে কারো কাছে কিছু চাইতে। আর এদের বেশির ভাগই আজ জাকাতের হকদার। কাজেই পরিবার বা আত্মীয়ের মধ্যে জাকাতদাতার উপর ফরজ এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। বিত্তশালীদের উপরও ফরজ ২.৫ শতাংশ জাকাত নামক ট্যাক্স আদায়ের। এটা শো-অফ করার সময় নয়। বরং এটা হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ কর্তৃক তাদের নির্ধারিত হক পরিশোধের সময়।

দেশের এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ধনীরা পরিপূর্ণভাবে জাকাত আদায় করলে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। দেশে দরিদ্রতা ও আয় বৈষম্য কমাতে জাকাত হবে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সরকারের উচিত আসন্ন বাজেটের আগেই জাকাত প্রদানকারীকে কর রেয়াত সুবিধা ঘোষনা করা। সরকারের জাকাত ফান্ডে অপ্রদর্শিত আয়কে বিনাপ্রশ্নে গ্রহণের ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। এই জাকাত সরকারি বাজেট ব্যবস্থার রিসোর্স মবিলাইজেশনের উৎস হতে পারে। যা সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে।

জাকাত কোনো রিলিফ বা ত্রাণ নয়, যে আপনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আদায় করবেন। আপনি কি আপনার ইনকাম ট্যাক্স কিংবা ভ্যাট, কর, রাজস্ব ইত্যাদি মাইকিং করে আদায় করেন? জাকাতও তেমনি আল্লাহ কর্তৃক আরোপিত একটি ফরজ ট্যাক্স। ইসলামে কালিমায়ে শাহাদাত ও নামাজের পরই জাকাতের স্থান। জাকাত একটি ফরয বিধান। সুতরাং জাকাত ফরজ জেনেও কেউ তা অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে জাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দিবে, সে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিল। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর” (সূরা তওবা: ৩৪-৩৫)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার জাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে। যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁছিয়ে ধরবে। অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন”।[বুখারি: ৮৪০৩]

জাকাতই বিশ্বের সর্বপ্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জাকাত আদায়ের ফলে সম্পদ আবর্তিত হয়। আপাতদৃষ্টিতে জাকাত দিলে সম্পদ কমে যায় বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা বেড়ে যায়। যেমন- জাকাত গরীবের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যা যোগান বৃদ্ধিতে চাপ প্রয়োগ করে। যোগান বাড়াতে প্রয়োজন হয় বিনিয়োগ বাড়ানোর। গড়ে উঠে নতুন কারখানা। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব হ্রাস পায়। বিনিয়োগ বাড়ালে মুনাফা বৃদ্ধি পায়। কাজেই সম্পদও বৃদ্ধি পায়। ফলে জাকাতও বেড়ে যায়। এভাবেই পুরো অর্থনীতিকে চালিয়ে নিয়ে যায় জাকাত।

অন্যদিকে হারাম সম্পদে কখনও জাকাত আসে না। হারাম সম্পদ দিয়ে জাকাত আদায়ও করা যায় না। জাকাত তো হলো হালাল সম্পদের কেবল ২.৫ শতাংশ। আর হারাম সম্পদ তো পুরো ১০০ শতাংশই দান করে দেয়াটা ওয়াজিব। কারণ এ সম্পদের মালিক ব্যক্তি নয়। কাজেই সুদ, ঘুষ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার , কালো টাকা, অন্যায়ভাবে দখলকৃত সম্পত্তি ইত্যাদি সর্ব প্রকার হারাম সম্পদ তাৎক্ষণিকভাবে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দায়মুক্ত হতে হবে।

এই রমজানে সবাই কত কষ্ট করে রোজা রাখছি। নামাজ পড়ছি। কিন্তু নামাজ রোজার মতো ফরজ বিধান জাকাত কি পরিপূর্ণভাবে আদায় করছি? বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিত্তশালী আছেন, তারা যদি পরিপূর্ণভাবে জাকাত আদায় করেন। তাহলে করোনা মহামারির সময়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয় হবার কথা নয়। যাদের উপর জাকাত ফরজ, তারা কি জাতির এই দুঃসময়েও নিজেদের সম্পদ আগলে রাখবেন? জাকাত দুনিয়ার ট্যাক্স নয় যে ফাঁকিঝুঁকি দিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে। এটা আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ট্যাক্স। গরীবের হক। ফাঁকি দিয়ে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ

ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :