(৫ম কিস্তি)
ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র অণুকাব্য
১. বিধাতার মহাপরিকল্পনা
মানুষকে ঘিরেই রচেছো বিধাতা তোমার মহাপরিকল্পনা,
মানুষ কতোটা নগন্য প্রাণি; সকলই তোমার আছে জানা।
মানুষকে দিলে লালসার রিপু,দিয়েছো কামনা,বাসনা,
তবু তার পাপ পুণ্যের হিসাব নেবে তুমি কণা কণা।
তোমার লীলায় আমার নিয়তির এঁকেছো এমন ছক,
তোমার কৃপার ইচ্ছাধীনেই আমার স্বর্গ-নরক।
২. কলির বন্ধু
ঘোর কলিকালে বন্ধু যে কাকে বলে,
সেই বাণিটা কি তোমাদের আছে জানা?
যার জন্যে তুমি প্রাণ দিতে খাড়া
তোমার বিপদে সে তো কাছে ভিড়বে না।
নিজেকে রেখে সে অতি নিরাপদ দূরে,
দেখবে তামাশা নানা অজুহাত জুড়ে;
আবার তোমার কখনো সুদিন এলে,
ভাবটা জমাবে সকলকে পিছে ঠেলে।
বন্ধু চেনা যে কতো মুশকিল; মুশকিলে পড়ে বুঝবে,
মেকি বন্ধুর জঙ্গল চষে আসল বন্ধু খুঁজবে।
নিরুপায় হয়ে ভাববে কেবল ‘বন্ধু’ মানেটা কী!
বন্ধু মানে কি ঘোরের পিরিতি; আবেগি জাদুর ভেলকি?
৩. জ্ঞানের দিব্যালোক
জ্ঞানের দিব্যালোক যদি আত্মাকে ভরিয়ে তোলে
স্বর্গীয় পুণ্য আভায়,
কেবল তখনি জানবে,
আলোকের ছুরি দিয়ে আঁধারের গলা কাটা যায়।
নইলে আঁধারকেই আলো ভেবে
জনে জনে করবে উষ্ণ আলিঙ্গন,
আর সেই আঁধারই তখন
জারি করে পাপ আর নরকের
জামিনের অযোগ্য সমন।
৪. মর্মন্তুদ হাহাকার
জনারন্যে কেবল শুনি এক ভূতুড়ে শূন্যতার জনারন্যে কেবল শুনি এক ভূতুড়ে শূন্যতার মর্মন্তুদ হাহাকার,
মহাকাশ বিজয়ী মানুষ অবলীলায় হয়ে গেলো
তুচ্ছ অণুজীবের নিরুপায় শিকার।
মৃতের মিছিলে নিত্য যুক্ত হয় পীড়িত,
আহাজারি ভেসে বেড়ায় বেকার ভূখার,
তবুও মানুষকে দিলো না নিষ্কৃতি অমানবিকতার
বিকৃত বিকার।
বিত্ত-বেসাত আজো গিঁটে গিঁটে বেঁধে রাখে এমন মমতায়,
যেনো ওসব সঙ্গে করে নিয়ে যাবে
শেষ যাত্রায় কবরে বা চিতায়।
৫. উপেক্ষিত আরাধনা
মানুষকে উপেক্ষা করে কেবল বিধাতার প্রতি যেই আরাধনা,
তা কেবলি শূন্যগর্ভ বিফল সাধনা-
নিষ্ফল উপাসনা, হেতুহীন পূজা-অর্চনা।
সৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্রষ্টার প্রতি যেই ভজন বন্দনা,
স্রষ্টা উপেক্ষা করেন সেই প্রার্থনার প্রতিটা বিন্দু-কণা;
মানুষকে ভালোবেসেই পেতে পারো বিধাতার অপার করুণা।
৬. অকারণ অংক কষা
নিজের সুখের কথা ভেবে কতো অংক কষো;
যোগ-বিয়োগ,লাভ-ক্ষতি, সুদাসল,
পরের সুখের অংক নিয়ে বসো-
নইলে সকলি পন্ড, সবই যাবে রসাতল।
যোগ-বিয়োগের খাতা তোমার ধূলোয় পড়ে কাঁদবে,
শূন্য পুন্য নিয়ে কেবল নরকেই ঘর বাঁধবে।
খোলা মন নিয়ে কিছু ধন তুমি দু:খিদের করে দেখো দান,
বিধাতার কাছে হও কতো বিশাল অংকের মর্যাদাবান।
৭. নিষ্ঠুর রসিকতা
ক্ষুধার জ্বালা কেমন জ্বালা
ক্ষুধার্ত ছাড়া কেউ জানে না
সেই জ্বালা কতো কষ্টের,
আর জানেনা সেই সমাজ
যেখানে সকল সম্পদ দখলে থাকে
নিতান্ত নষ্টের।
তাই ভূখাদের নিয়ে তারা করে নিষ্ঠুর রসিকতা,
জানেনা যে,সভ্যযুগে এরি নাম নগ্ন বর্বরতা।
৮. জীবনের সার্থকতা
মানুষ যদি ভূখা-নাঙ্গা মানুষের পাশে না দাঁড়ায়,
আর্ত মানবতার সেবায় মর্মের হাত না বাড়ায়।
বোধে যদি মানুষের কষ্টেও না জাগে মানবতা,
মানব জীবনের আর থাকে কি কোনো তুচ্ছ সার্থকতা?
৯. নন্দিত স্বর্গপুর
মানুষে মানুষে যেই ভেদরেখা বর্ণ ধর্ম বিত্তের,
তাতেই মানুষ পড়েছে বৃত্তে মনিব এবং ভৃত্যের।
ধর্ম বর্ণ বিত্তের ভেদ যেই ক্ষণে হবে দূর,
সে ক্ষণেই হবে মর্ত্যভূমি নন্দ স্বর্গপুর।
১০. ঘুনপোকার দৌরাত্ব
উইপোকা, তেলাপোকা, ছারপোকা দমনের
কীটনাশক কিনে আনো কতো,
সমাজের ঘুনপোকার নাশক মিলেনা;
ওরা রয়ে যায় আগেরই মতো।
বাইরের পোকা মারবার আগে মনের পোকাকে মারো,
নইলে তুমি যাবে রসাতলে; পোকার ভাগ্য পোয়াবারো।