কেনাকাটা দ্রুত সেরে নিন, হাসপাতালের কিছু বেড এখনো খালি!

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২১, ২১:৫৯

বোরহান উদ্দিন

সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি রেখেই বলছি- আপনারা বলেছিলেন ‘স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ তো মানা হবেই, প্রয়োজনে ক্রেতাদের ডাবল মাস্ক দেবেন। তবুও দোকান খুলে দেয়া হোক।’ কিন্তু রবিবার প্রথম দিনে আপনারা আর আমরা মিলে যা করলাম তাতে কত মানুষের ঈদ যে হাসপাতালের বিছানায় কাটবে, আর কত মানুষ যে স্বজনদের হারিয়ে কাঁদবে, তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন! অবশ্যই তেমন কিছু প্রত্যাশা করি না।

আর সামনে তো আরও সময় বেড়েছে। বিকাল ৫টার পরিবর্তে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে কেনাকাটা। কারণ ইফতারের পরই নাকি বেশি বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে ঈদ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা খালি চোখে অনুমান করা কঠিন।

করোনা ঠেকাতে সরকারের ঈদের আগে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তা ভাঁজ পড়েছিল। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ দোকান বা ব্যবসা দিয়েই তার সংসার, কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া সব পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে, কখনোই নামিদামি শপিংমল ছাড়া রাজধানীসহ দেশের অন্য কোনো মার্কেটে মাস্ক ছাড়া ঢুকতে খুব একটা বাধার মুখে পড়তে হয় না ক্রেতাদের। কোথাও কোথাও অবশ্য হ্যান্ডস্যানিটাইজার দেয়া হয়। অথচ এই মাস্কই অনেক বেশি নিরাপত্তা দিতে পারে করোনার হাত থেকে।

এমন বাস্তবতার মধ্যে ‘ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দারের’ মতো গত ১৮এপ্রিল দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। যেখানে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখা হবে। সেখানেই বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে ক্রেতাদের ডাবল মাস্ক সরবারহ করা হবে।

স্বভাবতই খুবই ভালো অফার ছিল। কারণ সামান্য একটা মাস্ক কিনতেও অনেকের যে পরিমাণ অনীহা এবং অজুহাত তাতে বিনামূল্যে ডাবল মাস্ক পেলে খারাপ কী!

বড় গলায় এতসব কথা বললেও অনেক জায়গায় দেখা গেছে খোদ দোকানদারদের মুখেই মাস্ক নেই। এই অবস্থায় ক্রেতাকে কোন সাহসে মাস্ক পরতে বলবেন ওই দোকানদার?

আর বাস্তবতা হলো রাজধানীর বড় শপিংমল ছাড়া যেসব জায়গায় মানুষ কেনাকাটা বেশি করতে যায় সেখানে কতটা নজর রাখা সম্ভব ব্যবসায়ী নেতাদের? আর যতটুকু সুযোগ আছে ততটুকুও কি আজ (রবিবার) মার্কেট খোলার দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন?  তাহলে কি আমরা ধরে নেব ক্রেতাকে ডাবল মাস্কের যে অফার দিয়েছিলেন তা কি শুরুর আগেই শেষ?

এবার আসুন সম্মানিত ক্রেতাদের প্রসঙ্গে। ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া, বঙ্গবাজারসহ আরও কিছু জায়গার চিত্র বলছে- মার্কেট খুলে দিবে সেই খবর প্রকাশের পর থেকেই অনেকে বোধহয় বাজারের তালিকা তৈরি করে রেখেছিলেন। কারণ সকাল নয়টায় দোকান খুলতে না খুলতেই অনেকে হাজির হয়ে গেছেন। কিছু মানুষের অবস্থা দেখে তো মনে হয়েছে-  লকডাউনে সব কাপড়চোপড় ইঁদুরে কেটে প্রায় শেষ করে দিয়েছে! তাই শেষ সম্বলটুকু গায়ে জড়িয়ে কোনোমতে দোকান পর্যন্ত গিয়ে ইজ্জত রক্ষা করেছেন।

কেউ কেউ হয়তো ভেবেছেন পরে গেলে আর মালামাল পাওয়া যাবে কি না তাই প্রথম দিনেই যাই। কেউ হয়তো চিন্তা করেছেন এবছরের পর আর কোনো ঈদে কেনাকাটার সুযোগ হবে কি না, তাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিনেও মার্কেটে যেতে ভুলেননি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘুরে বেড়ানো ছবি কিন্তু এমনটাই বলে দিচ্ছে! আর দোকানির যেহেতু মাস্ক নেই, করোনার থেকেও শক্তিশালী অনেক ক্রেতাও তাই মাস্ক ছাড়াই দিব্যি ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা সেরেছেন। অথচ একবারও করোনার ভয়াবহতার কথা কেউ বিবেচনায় রাখেনি।

এবার বিদায়ের পালা। তবে ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান দিয়ে যেতে চাই। করোনা চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বড় এক হাজার শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন হয়েছে সম্প্রতি। ঢাকার মহাখালীতে ডিএনসিসির এই হাসপাতালে একশ আইসিইউর দুটি মাত্র খালি এখন আছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৫১ জন মানুষ। মোট ভর্তি হয়েছেন ৭০১জন করোনা রোগী।

অন্য হাসপাতালগুলোর চিত্র তুলে ধরলে ভড়কে যাবেন। কারণ বেশিরভাগ  হাসপাতালে আইসিইউ যেন সোনার হরিণ। একজন রোগী মারা যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন আরও অনেকে। ওই রোগী মারা গেলেই নতুন রোগী তুলে দেয়া হয় সেখানে।

তবে যাদের কেনাকাটা করতেই হবে তাদের ভয়ের কিছু নেই। কারণ আইসিইউ নিয়ে  কাড়াকাড়ি এখনো কিছু কিছু হাসপাতালে সাধারণ বেড হাতেগোনা কিছু খালি আছে! তাই কোনো কিছুতেই যেহেতু সচেতনতা আসছে না সেহেতু সিট ফাঁকা থাকা পর্যন্ত কেনাকাটা তো চলতেই পারে, নাকি!

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটা কথা বলে শেষ করি- ‘প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে রোগী শনাক্ত হলে পুরো ঢাকাকে হাসপাতাল বানালেও সামাল দেয়া যাবে না।’ আসুন শুধু এই কথাটা মাথায় রেখে ঘরের বাইরে যাই।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী