পুরান ঢাকায় ‘লকডাউন’ শুধু নামে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ২০:৪৭

সারাদেশে দেশে ঢিলেঢালাভাবে চলছে লকডাউন। তবে রাজধানীর পুরান ঢাকায় লকডাউন শুধু নামে। এখানে মানুষের চলাচল, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, কাজ-কর্ম সব কিছুই স্বাভাবিক। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বলতে এখানে কিছুই নেই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলমান রয়েছে লকডাউন। দুই দফা বাড়িয়ে আগামী বুধবার পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা। করোনা পরিস্থিতির সেভাবে উন্নতি না হওয়ায় আজ দুপুরে আরও এক দফা এ সময়সূচি বাড়ানো হয়েছে। ফলে লকডাউন চলবে ৫ মে পর্যন্ত। যদিও এরই মধ্যে রবিবার থেকে শুধু গণপরিবহন বন্ধ রেখে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। অনুমতি পেয়েই দোকানপাট, মার্কেট থেকে শুরু করে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ফলে সড়কে মানুষ চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। রাজধানীর পাইকারি মার্কেট ও ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে পরিচিত পুরান ঢাকার পথঘাট, মার্কেট এখন সয়লাব মানুষে। কারও মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতাই যেন নেই। সোমবার দিনভর পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

পুরান ঢাকার পাকিস্তান মাঠ, আগা সাদেক রোড, বংশাল, নবাবপুর, বঙ্গবাজারসহ আশপাশের এলাকার সড়কে মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। সড়কের মানুষের পাশাপাশি রিকশা, পণ্য ও ব্যক্তিগত পরিবহনের চাপও ছিল অতিরিক্ত। যা সৃষ্টি করেছে যানজট।

আগা সাদেক রোডের এক বাসিন্দার কাছে চলমান করোনাকাল ও লকডাউনে সেখানকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউন আবার কি? সবই তো খোলা। মানুষ কি ঘরে বসে থাকবে? যে যার কাছে বের হইছে।’

ওই বাসিন্দার কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল সেখানকার পরিস্থিতির। স্থানীয় কোনো দোকানপাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নেই। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারি দোকানগুলোতে চলছে পণ্য আনা-নেয়ার হিড়িক। এসব কাছে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মালিক-শ্রমিকরা।

গতকাল মার্কেট খোলার পর থেকেই ব্যস্ত বঙ্গবাজার। রাজধানীতে পোশাকের অন্যতম পাইকারি বাজার এটি। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটটিতে পাইকারি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ব্যস্ততা এখন চরমে।

কারখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশা বোঝাই করে নারীদের থ্রিপিছ নিয়ে এসেছেন আবু দাউদ। তিনি একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক।

সিএনজি থেকে পণ্য নামানোর ফাঁকে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় আবু দাউদের। তিনি জানান, মার্কেটে চাহিদা অনুযায়ী থ্রিপিছ সরবরাহ করতে তাদের কারখানাগুলোতে এখন অনেক ব্যস্ততা।

কর্মব্যস্ততার চিত্র ফুটে ওঠেছে নবাবপুর চৌরাস্তায়। পন্য আনা-নেয়া ও বিকি-কিনির ব্যস্ততায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে নবাবপুর, রাজধানীর মার্কেটের চারদিকের সড়কে।

নবাবপুর মার্কেটের বাইরে ও ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মার্কেটের অধিকাংশ বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। এদিকে মার্কেটে আসা ক্রেতাদের বেশিরভাগই আসছেন মাস্ক ছাড়া। ছোট দোকানের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছে সওদা।

মার্কেটটির রতন ইলেকট্রিক নামের একটি দোকানের মালিক মো. রতন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনা আবার কি, এত করোনা দেখলে জীবন চলব? মাস্ক পইরা কতক্ষণ থাকা যায়? এমনই ইন্ডিয়ান, চায়না মাল নাই। বেচাকেনা নাই। আছি সমস্যায়।’

আদাবর থেকে নবাবপুর মার্কেটে পণ্য কিনতে এসেছে মো. সুজন। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে সুজন বলেন, ‘আমি কন্টাকটার (কন্ট্রাক্টর)। সাইট বন্ধ থাকলে নিজে কয়েকদিন, এমনকি এক মাস চলার মতো সামর্থ্য আমার আছে। আমার ১৮ জন মিস্ত্রি, হেলপার। তাদের সামর্থ্য নেই। আমি যে তাগো বসাইয়া চালামু, সেই সামর্থ্য আবার আমার নাই। সারা বছর যারা আমার সঙ্গে কাজ করে এই খারাপ সময়ে আমি তাগোরে ফালাইয়ে দেই কিভাবে? সাইট চালু রাখছি, ওরা কাজ করতেছে। বিল দিতে পারতাছি। ওগোরে দিতে পারতাছি।’

করোনা সংক্রমণ ও সতর্কতার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘এই সব কথা কইয়াই তো আপনারা আমগো ক্ষতিটা করেন। খালি করোনার দিকে চাইয়া থাকলে হইবো? চলা লাগবো না?’

এদিকে পুরান ঢাকার সদরঘাট, বাবুবাজার, সোয়ারিঘাট, ইসলামবাগ, হাতিরঘাট, লালবাগসহ আশপাশের এলাকায় মানুষের চলাচল ও যান চলাচল গত দুই দিনের তুলনায় কয়েকগুন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, চানখারপুর, বেড়িবাঁধ সিকসন এলাকায় রিকশা-গাড়ির বাড়তি চাপে ব্যস্ত সময় পাড় করতে দেখা গেছে সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।

ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/কারই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :