লকডাউনে পিস হোমের শিশুদের মানবিক উদ্যোগ

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৫২

করোনাকালীন দুর্যোগে মানুষ মানুষের পাশে থাকবে এটাই মানবিকতার দাবি। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি মানুষের কষ্টে মানুষের পাশে থাকার নানান উদ্যোগ। চোখে পড়েছে আর্তের আহাজারি এবং প্রশান্তির চিত্রও। লকডাউনে শহরে আটকেপড়া দরিদ্র ও মেহনতি মানুষের কষ্ট অবর্ণনীয়। দেশের মানুষের প্রয়োজনে লকডাউনের চিত্র গত বছরের মতো না হলেও সচেতনতার দাবি অনুসারে কিছু মানুষ সতর্ক চলাফেরা করেছে। কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ যদি কাজ না পায় তাহলে তাদের রাতে ঘরে ফেরা হয়ে উঠে দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা। ঘরের শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের জন্য অন্নের যোগান দেয়াটাই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

নগরীর রিকশাচালকদের লকডাউনে একটা অবাধ সুযোগ থাকলেও আরোহী কম থাকায় তাদের এই অন্নের সন্ধান হয়ে উঠে কঠিনতর। লকডাউন কড়াকড়ি না বলে গত বছরের মতো সহায়তার চিত্র অতটা ব্যাপক নয়। সাধারণত মধ্যবিত্ত মানুষ এই উন্মুক্ত সহায়তায় আসতে পারে না লোকলজ্জায়, কিন্তু নিম্নবিত্তের মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্য সহায়তা নিতে সংকোচ করে না কিন্তু এই সময়ে এমন দৃশ্য তুলনামূলক কম। এমতাবস্থায় স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক দাতব্য সেবা সংস্থা লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো) কর্তৃক উদ্ধারকৃত এবং আশ্রয়প্রাপ্ত একসময়ের পথবাসী শিশুরা উদ্যোগ নিয়েছে এই মানুষদের পাশে থাকার।

সেমতে আজ বুধবার রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় অর্ধশত রিকশাচালকদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে তারা। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পাশে থেকেছে পথশিশুদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান লিডো। চাল, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদি সহযোগে একটি পরিবারের সপ্তাহখানেকের খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছে কাশেম, সুমি, নিজাম, আরজু এবং জেসমিনরা। উল্লেখ্য, এই শিশুরা লিডো প্রতিষ্ঠিত স্থায়ী নিবাস পিস হোমে বাস করে এবং এদের মধ্যে কিছু শিশু ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পথশিশু বিশ্বকাপ-২০১৯ এ বাংলাদেশের জাতীয় দলের সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিল। পাশাপাশি এই শিশুরা পথশিশুদের অধিকার রক্ষা এবং দাবি আদায়ে স্ট্রিট চিলড্রেন টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

শিশুদের এমন উদ্যোগ সম্পর্কে স্ট্রিট চিলড্রেন টাস্কফোর্সের সভাপতি স্বপ্না আক্তার সুমি জানান, আমরা এমনভাবেই শিক্ষা নিচ্ছি যাতে আমাদের জীবন আমাদের একার জন্যই না হয় বরং তা নিবেদিত হয় মানুষের জন্য। আমাদের এই শিক্ষা, বোধ এবং অতীত পথবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা চেষ্টা করেছি এই মানুষদের পাশে থাকার জন্য। আমাদের আহ্বান থাকবে আপনারাও আপনাদের মতো করে পাশে থাকুন আর আমাদের এই উদ্যোগকেও উৎসাহিত করুন।

শিশুদের ব্যতিক্রমী এই আয়োজন সম্পর্কে লিডোর নির্বাহী পরিচালক বলেন, শিশুদের এমন মানবিক উদ্যোগ সত্যি আশার আলো দেখায়। দেশের আগামী প্রজন্ম এভাবে ভাবছে এবং সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করছে এটাইতো আমাদের আনন্দ দেয়। আমরা যারা সমাজকর্মী আমাদের বুকটা ভরে যায় এমন উদ্যোগ দেখলে।

শত হতাশা আর হাজার অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এমন ইতিবাচক সংবাদ আমাদের পুলকিত করে। আমাদের আনন্দ দেয়। যারা এক সময় নিজেরাই সাহায্যের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতো আজ তারা নিজেরাই সাহায্য নিয়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে। পরিবর্তনগুলো স্বল্প পরিসরে হলেও এক সময় এই পরিবর্তবগুলোই ইতিবাচক বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিয়ামক হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :