কারখানার বিষাক্ত এসিডে ঝলসে গেছে ৩০ শতক ভুট্টা ক্ষেত
প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:১৮ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:২৯
নীলফামারীর সৈয়দপুরে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা জিআই তার তৈরির ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বিষাক্ত এসিডে ঝলসে গেছে ৩০ শতাংশ জমির ফলন্ত ভুট্টা ক্ষেত। এর প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। সেই সঙ্গে অভিযোগ করার কারণে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়ার নাজমুল হুদা সরকার জানান, কামারপুকুর ডিগ্রি কলেজের দক্ষিণে কামারপুকুর বাজার থেকে বয়ে যাওয়া খাল ও সড়ক সংলগ্ন আমার ১২০ শতক কৃষি জমি আছে। এই জমির পাশেই প্রায় পাঁচ বছর আগে আবাদ করা কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে "এলাহী কুটির শিল্প" নামে একটি জিআই তার ও তারকাঁটা তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নাজমুল হুদা বলেন, এই কারখানা থেকে বর্জ্য হিসেবে বিষাক্ত উত্তপ্ত পানি ও সালফার এসিড নির্গত হয়। গত প্রায় তিন বছর যাবত এই বর্জ্যের প্রভাবে আমার উর্বর জমিতে আবাদ কম হওয়াসহ ফলন্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরের মত এবার আমি ওই জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতক জমির ফলন্ত ভুট্টা গাছ ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত এসিডে ঝলসে গেছে। এতে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
আগের দুই বছরও এভাবে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কারখানার মালিককে বিষয়টি জানিয়ে নিরাপদে এসিড ও গরম পানি ঝুঁকিমুক্তভাবে সরানোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানিয়েছি। কিন্তু তারা সে কথা কানে নেয়নি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সামান্য টাকা দিয়ে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়েছে। কিন্তু এবার আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এবার ফসলের ক্ষতির বিষয়ে কারখানার মালিক জমসেদকে জানাতে গেলে তিনি না থাকায় তার জামাতা বদরু অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি বলেন- আমার কারখানার কারণে ভুট্টার কোনো ক্ষতি হয়নি। এ ব্যাপারে আর কখনো আমার কাছে আসবেন না। কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবেনা।
এতে বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১১ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষক নাজমুল। কিন্তু ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ তার। এমনকি কৃষি বিভাগের কেউ অভিযোগ তদন্তেও আসেনি। ফলে বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
এদিকে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় কারখানা কর্তৃপক্ষ নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় আছি। একদিকে ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছি। অন্যদিকে প্রশাসনের নীরবতায় প্রভাবশালী শিল্প মালিকের লোকজনের হুঙ্কারে সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অভিযোগ করে প্রতিকার দূরের কথা, উল্টো আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এ ব্যাপারে এলাহী কুটির শিল্পর ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নাজমুল হুদার জমিই ভালো না। তাই ফসল হয় না। এতে কারখানার কোনো দায় নেই।
আগে তো ফসল নষ্ট হয়নি, আবাদও শতভাগ হয়েছে। এখন কেনো হচ্ছে না? জমি খারাপ হয়েছে কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কারখানার মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মো. বদরুর সঙ্গে ফোন কথা হলে তিনি ঔদ্ধত্বপূর্ণ ভাষায় এ প্রতিবেদককে বলেন, যেখানে কৃষি অফিস, ইউএনও এবং ডিসিকে অভিযোগ করেছে। তারা যখন কিছু বলছে না। সেখানে আপনাদের এতো তাগাদা কেনো। আপনারা কি ওই কৃষকের উপদেষ্টা হয়েছেন? ফ্যাক্টরির জন্য ফসলের কোনো সমস্যা হয়নি। হলে অন্য জমিতেও হতো। আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ দিব না। যা করার আছে করেন।
কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, অবশ্যই ফ্যাক্টরির বিষাক্ত এসিডের কারণেই এভাবে ভুট্টা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কামারপুকুর ইউনিয়নের ইটভাটা ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ক্ষতিপূরণ দিয়েই কৃষকদের সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রেখেছে। আপনার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর আপনি দাপট দেখিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে কৃষককে দাবিয়ে রাখবেন, তা হয় না।
উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগমের সঙ্গে ফোন কথা হলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু যেরকম (লকডাউন) সময় চলছে তাই বিষয়টি দেখার সুযোগ হয়নি।
১৫ দিনেও কেন কৃষি অফিসের কেউ ঘটনাস্থলে আসেনি- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রমজানেও আমরা কৃষি ও কৃষকের পাশে আছি। অথচ আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করা দরকার। ওই কৃষকের ব্যাপারে যখন ইচ্ছে হবে তখন দেখবো। আপনাদের কথায় কি আমাকে চলতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/কেএম)