ময়মনসিংহে ফজলু বাহিনীর তাণ্ডব: প্রাণভয়ে বাড়ি ছাড়া অসহায় পরিবার

জয়নাল আবেদীন, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৫৬

ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে ফজলু বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিরীহ একটি পরিবার নয় দিন ধরে বাড়িঘর ছাড়া। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ১৭ এপ্রিল ইফতারের সময় সশস্ত্র হামলা করে চারজনকে আহত করা হয়। সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের সানাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা নিরীহ ৮১ বছর বয়সী আব্দুল হেলিমের পরিবারে এই হামলা-ভাঙচুর হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় পরিবারটির সদস্যরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হেলিম ও তার পরিবারের লোকজনের উপর গত ১৭ এপ্রিল সশস্ত্র প্রায় ৩৫/৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় পৈশাচিক কায়দার তাণ্ডব চালানো হয়। পিটিয়ে ও কুপিয়ে চারজনকে রক্তাক্ত জখম করা হয়। পরে ব্যাপক ভাঙচুর করে বাড়ি থেকে লোকজনদের বের করে ঘরে থাকা নগদ টাকাসহ প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় আবদুল হেলিম বাদী হয়ে গত ২১ এপ্রিল মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ফজলু বাহিনীর ফজলুল হক, আবুল কালাম, অসিম উদ্দিন, আব্দুল মতিন, সাইফুল, আবদুল গনি, শহিদুল মুন্সি, জাহাঙ্গীর আলম বাবু, নাইম ইসলাম, রেজাউল করিম, কামরুল ইসলাম ওরফে মুন্সি, আনারুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মুন্সি ও আরও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন।

এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব শত্রুতার কারণে এ হামলা চালিয়ে প্রতিশোধের নেশায় বেসামাল হয়ে পরিবারটিকে শেষ করে এলাকা ছাড়া করেছে ফজলু বাহিনী। সম্পদ আত্মসাৎ করার নেশায় বিভোর হয়ে সন্ত্রাসী ফজলু ও তার বাহিনী ইফতারের সময় পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল হেলিমের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি অবুঝ শিশুকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে এদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আশপাশে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরো বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা ভয়ে কিছু বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

এক পর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, ফজলুল হক ও তার লোকজন অত্যন্ত হিংস্র। এরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানও এদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস নেই। খুন, চুরি, ডাকাতি, মাদক কারবারসহ সব অন্যায় অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত। এদের সবার নামে কমবেশি আরো মামলা আছে্।

এলাকাবাসী জানায়, সন্ত্রাসী হামলা-মামলা এদের পেশা ও নেশা। এদের অত্যাচারে আরো একটি পরিবার অনেক আগে এলাকা থেকে চলে দিনাজপুর গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মামলার আসামিরা আব্দুল হেলিম ও তার পরিবারের গরু, ছাগল, পুকুরের মাছ, তিন একর জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে।

ইতিপূর্বেও সন্ত্রাসী ফজলুল হকের বাহিনী বৃদ্ধ আব্দুল হেলিমের পরিবারের উপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হামলা করে মহিলাসহ বেশ কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখম করে। এই ঘটনায় আ. হেলিমের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় গত ৯ মার্চ মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়- ফজলুল হক, আবুল কালাম, আ. মতিন, সাইফুল, আহ গনি, নইম ও অজ্ঞাতনামা আরো চার-পাঁচজনকে।

এছাড়াও ফজলুল হক গংদের বিরুদ্ধে আ. হেলিমের ছেলে নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে ময়মনসিংহের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদর অঞ্চল আদালতে গত ২ মার্চ জানমালের নিরাপত্তার শঙ্কায় মামলা করেছে।

হেলিমের পরিবার ছাড়াও জহুরা নামে আরেকজন প্রতিপক্ষ বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় ফজলুল হক গংদের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল থানায় জিডি করেছেন। এতো অভিযোগের পরও পুলিশ প্রশাসন আসামিদের গ্রেপ্তার কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় এই সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডব ক্রমেই বেড়ে চলছে।

এদিকে বৃদ্ধ আব্দুল হেলিম ও তার পরিবারের লোকজনদেরকে হয়রানির মধ্যে রাখতে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। কোতোয়ালি মডেল থানায় গত ৫ মার্চ মারধর করে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ এনে বৃদ্ধ আব্দুল হেলিমের ছেলেদের আসামি করে এই মামলা দেন ফজলুল হক। মামলায় ৪৮ বছর বয়সী চার সন্তানের মাকে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে গর্ভপাত ঘটানোর ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান বলেন, ঘটনার পরপরই সংবাদ পেয়ে আমি গিয়েছি। অভিযুক্ত ফজলুসহ অন্যান্যরা কাউকে মানে না।

সন্ত্রাসী ফজলুল হক ও তার বাহিনীর দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে অসহায় আ. হেলিমের পরিবারকে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা এবং লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে শান্তিতে বসাবাসের সুযোগ করে দিতে পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :