গানে গানে কৃষকের ধান কেটে দিলেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৫৬

গানে গানে দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে দিলেন যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। শ্রমিক সংকট থাকায় জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন তারা। শুক্রবার ভোর ছয়টায় যশোর সদর উপজেলার পতেঙ্গালী এলাকায় কৃষক ইমরান হোসেনের জমির ধান কেটে এ কার্যক্রমের সূচনা করা হয়। পরে লালনগীতিসহ বিভিন্ন ধরনের গানের সুরে সুরে কৃষকের বিঘার পর বিঘা ধান কেটে দেন তারা।

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা জানান, করোনার মহামারীর কারণে গত বছর শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কৃষকের ধান কাটেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেছেন তারা। প্রথম দিনে সদর উপজেলার পতেঙ্গালী, লাউজানি ও মালঞ্চী গ্রামের সাত কৃষকের আট বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন। যতদিন মাঠে ধান থাকবে ততদিন এ কার্যক্রমও অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ধান কাটায় অংশ নেওয়া খবির শিকদার নামে এক সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, ‘শহরের মানুষ হিসেবে কৃষকের ধান উৎপাদন ও ঘরে তোলার শ্রম সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। গতবছর করোনার কারণে প্রথম কৃষকের ধান কাটার কাজে অংশ নিই। ভালোই লেগেছিল। যে কারণে সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বানে এবছরও ধান কাটতে এসেছি। কৃষকের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ‘নিজে কৃষকের ধান কাটছি। ভালো লাগছে। অনেক দিন পর নিজেকে প্রফুল্ল মনে হচ্ছে।’

যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, ‘মানুষের সাথে, মানুষের পাশে এবং মানুষকে নিয়েই সংস্কৃতি। সেই চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ। যারা দেশের অর্থনীতির চাকা, উৎপাদনের চাকা সচল রাখে সংকটকালে তাদের পাশে দাঁড়াতেই সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ধান কাটছে। এর মাধ্যমে মাটির সাথে, কৃষকের সাথে সম্পর্ক তৈরি হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য সুকুমার দাস বলেন, 'গত বছর আমরা পহেলা মে ধান কাটা শুরু করেছিলাম। এ বছরও একইদিনে ধান কাটা শুরুর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এবছর খরতাপ হাওয়ায় দ্রুত ধান পেকে গেছে। এজন্য আজ থেকেই ধান কাটা শুরু করেছি। গত বছর ১২ দিনে শতাধিক বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছিল। এ বছর তার থেকে কিছু বেশি জমির ধান কাটার ইচ্ছা আছে।'

এদিকে, শ্রমিক সংকটের এই সময়ে বিনাখরচে ধান কাটাতে পেরে খুশি কৃষকরা। পতেঙ্গালি গ্রামের ইমরান হোসেন জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে ধান করেছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে নিজেই পাঁচ শতক জমির ধান কেটেছেন। এরপর সাংস্কৃতিক কর্মীরা ধান কাটবে খবর শুনে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা আজ বাকি জমির ধান কেটে দিয়েছেন। এতে তিনি খুব খুশি।

পঙ্কজ সরকার নামে অপর একজন কৃষক বলেন, 'আমার দেড় বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটাতে পারছিলাম না। আজ সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঠে ধান কাটতে দেখে তাদের আমার জমির ধান কেটে দেওয়ার অনুরোধ করি। এরপর তারা আমার জমির ধান কেটে দেন। এজন্য তারা কোনো পারিশ্রমিক নেননি।সাংস্কৃতিক কর্মীদের এমন মহৎকাজের জন্য তাদের মঙ্গল কামনা করি।'

(ঢাকাটাইমস/৩০ এপ্রিল/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :