রাজবাড়ীতে চলছে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব

এম.মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
 | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ২০:১৪

রাজবাড়ীর ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি বাণিজ্য করতে হরহামেশা চলছে সর্বত্র পুকুর কাটার কাজ। আর লাইসেন্সবিহিীন ভেকু যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা সহজ হওয়ায় পুকুরের নামে ফসলি জমি খনন করতে সময়ও লাগে অনেক কম। মাটি কাটার কামলার দরকার হয় না। মাত্র একজন ভেকুর চালক ও হেলপার দুদিনেই একটি পুকুর কেটে ফেলতে পারে। প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকার কারণে রাজবাড়ীতে থামছে না অবৈধ পুকুর খনন। তবে মাঝ মধ্যে সরকারি জমিতে পুকুর কাটার অভিযোগে কিছু অভিযান পরিচালিত হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেটচক্র বর্ষা পরবর্তীতে ও বর্তমানে অতিমাত্রায় খরা হওয়ায় আবারও মেতে ওঠেছে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক এস এম আকবর বলেন, অপরিকল্পিত ও অবৈধ পুকুর খননের ফলে দিন দিন বিভিন্ন ব্লকের ২/৩ ফসলি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এলাকার কিছু দালালকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে প্রকাশ্য দিবালোকেই পুকুর খননের কার্যক্রম শুরু করছে। এমনি পুকুর খননের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে জেলার সর্বত্র।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুরে কালুখালি উপজেলার বাসিন্দা মাটির দালাল শমসেরের তত্ত্বাবধানে ফসলী জমিতে অবৈধভাবে দীঘি খনন করা হচ্ছে। এই রকম দৃশ্য পাংশা উপজেলার সব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামেই চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও জেলার সদর, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি ও কালুখালি উপজেলায় ও হরহামেশা চলছে এই পুকুর কাটার নামে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি বাণিজ্য।

বিভিন্ন সময় অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। এসব অভিযানে ভেকুর যন্ত্রাংশ নষ্ট করা হলেও লাভ হয়নি মোটেও। নতুন করে ভেকু এনে আবারও দীঘি খনন কাজ শুরু করা হয় সেখানে। এদিকে এই পুকুর খননের বিরুদ্ধে এবং এলাকায় জলাবদ্ধতার হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিনিয়তই আসছে অভিযোগ।

পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষি জমির (টপসয়েল) ও পুকুর খননের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে কিছু প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আবার এই মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় রাজবাড়ীর পুনঃনির্মাণাধীন নতুন আঞ্চলিক মহাসড়কসহ প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তাও ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে পুকুর খনন করাও দন্ডনীয় অপরাধ। পরিবেশ আইন অনুয়ায়ী কৃষি জমির মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য দিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া, বাহাদুরপুর, হাবাসপুর, সরিষা এলাকায় কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। আবার খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কাঁকড়া নামীয় এসব ট্রাকের অবাধ চলাচলের কারণে সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া ওই সব ট্রাক থেকে মাটি পড়ে ধুলোবালির স্তুপ জমে যাওয়ায় ওই সব রাস্তা দিয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কির্ত্তনিয়া বলেন, এই সমস্যাটি পাংশায় চরম আকার ধারন করেছে। বিষয়টি উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় তুলে ধরে একটি রেজুলেশন করা হলেও বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না।

পাংশা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এসব কারণে প্রতি মৌসুমে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উপরে। বর্ষার সময় জলাবদ্ধতার কারণ পানি নিষ্োষণের বিভিন্ন ব্রিজ কালভাটের মুখ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ জন্য পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রশাসন ও এলাকাবাসীর নানা উদ্যোগের পরও তার তোয়াক্কা করছেন না স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এলাকার হাজার হাজার কৃষকের পেটে লাথি মারতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। এভাবে দীঘি খনন করা হলে ফসল উৎপাদনসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিতসহ ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। বর্ষার পানি সহজে নামবে না। ফলে বাড়িঘর ও ফসলাদি ডুবে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।

এ বিষয়ে কয়েকজন দীঘি খননকারীর সঙ্গে কথা হলে তারা ফসলী জমির কথা অস্বীকার করে বলেন, জমিগুলো সারা বছর কুচুরীপনায় ভরে অনাবাদী পড়ে থাকে। তাই সেখানে পুকুর খননের উদ্যোগ নিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, কোনোভাবেই পাংশার যেকোন এলাকায় আর পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে খবর পাওয়া মাত্রই অতি দ্রুত সেখানে গিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুকুর খননকারী যেই হোক তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :