আমার বাবা হিরো, আর ১ মে হিরোদের দিন

প্রকাশ | ০১ মে ২০২১, ১৩:৩৯

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

বাবা ভয়ানক রাগী। আমাদের পরিবার, পাড়া প্রতিবেশি সবাই তার রাগ সম্পর্কে জানতো। ছোট বড় নানা বয়সের বাবার বন্ধু ছিল। প্রচুর বই আর পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি তিনি বেশকিছু ভাষারপ্ত করতে পেরেছিলেন।

সারাজীবনের তার বাজার করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো শখ ছিল বলে আমার মনে পড়ে না। নেতাজী সুভাষ নিয়ে বাবার অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। আমি আমার কৈশরে আমি সুভাষ বলছি নামের একটা ইয়া মোটা বই পড়ে ফেলেছিলাম। আমার পছন্দের নায়িকা কারিনা। বাবার অপছন্দের নায়িকা ছিল।

এত এত রাগি মানুষটার সকল যুক্তি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হত। বাবার সাথে আমার শৈশব-কিশোর বেলার স্মৃতি খুবই সীমিত। বড় হবার সাথে সাথে তার সাথে সম্পর্ক গাঢ় হলো। বাবার সাথে আড্ডা দিয়ে স্বাদ পায়নি এমন লোক পাওয়া কঠিন।

আমি তার সাথে বাজারে যেতাম কালি বোয়াল, কালি পেপে, কি করে ভাল কাঠাল চিনতে হয়, চাল কিনতে গিয়ে চাল চিবিয়ে পরীক্ষা করা, নানা কিছু শেখাতেন। আমার পরিবারে কারো এ বাজার নিয়ে আগ্রহ নেই। তাই আমি নিয়মিত বাজারে যেতাম।

বাবার ধারণা ছিল তিনি ৫২ বছর বাঁচবেন। সে নিয়ে তিনি আমাকে তার যুক্তি বলেছিলেন। ৫২ যখন পার হলো, আমাকে বলেছিলেন বাকিটা বোনাস।

আমি আর আমার ভাই শ্রমিকদের সাথে উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত। ভোর রাতে খবর এল ঢাকায় ফিরতে হবে। আমরা ঢাকায় ফিরেছিলাম।  

১ মে রাতে আমার বাবার মৃত্যু হয়।শহর থেকে অনেক দূরে এক নির্জন স্থানে বাবার সমাধি। তার পাশে আমার দাদা, চাচা। পারিবারিক সেই কবরস্থানের এখন পরিধি বেড়েছে।

আমি প্রতিবার এড়িয়ে যেতে চাই,  কি ভয়ানক ১ মে আসে প্রতিবছর।আমি জানি আমার বাবা মানে হিরো।  আর ১ মে হিরোদের দিন। শত ক্ষোভ হতাশা থেকেও আমি ভালবাসি বাবাকে আর ১ মে শ্রমিক দিবসকে।

লেখক: পরিবেশ আন্দোলন কর্মী

ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/এসকেএস