বালুভর্তি ট্রাকের দাপটে সড়কে ধুলার রাজত্ব, অতিষ্ঠ পথচারী

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ফুলজোড় কলেজ রোড নামে খ্যাত আঞ্চলিক সড়কটি বালু ব্যবসায়ীদের কারণে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভারি ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়কটির বেশির ভাগ জায়গায় উপরের স্তর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। 

বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে ফুলজোড় কলেজ থেকে বকুল তলা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাটি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে সারাদিন বালু ভর্তি ট্রাক চলার কারণে বালু উড়ে আশপাশের দোকানসহ পথচারীদের চোখে মুখে ঢুকে পড়ছে। বিরামহীন ট্রাক ও ড্রাম ট্রাকের আবাধ চলাচলে কারণে রাস্তার বেশির ভাগ অংশ খানাখন্দ হয়ে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে।

সড়কটির এমন বেহাল দশার কারণে সাধারণ পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সারাক্ষণ বালুভর্তি ট্রাকের চলাচলের কারণে ধুলোয় অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের মানুষ। অসহ্য ধুলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এ সড়কে ধুলাবালি এতই বেশি যে একটা ট্রাক গেলে সামনে আর কিছুই দেখা যায় না। এ সড়কটির ধুলাবালি ঘন কুয়াশাকেও হার মানিয়েছে। ট্রাক চলাচলের কারণে ঘন ধুলাবালিতে দিনকে যেন রাত বলে মনে হয়।

কলেজ থেকে বকুল তলা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার ধারে বসবাসরত সাধারণ মানুষ ও দোকানদারদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ধুলোবালিতে রাস্তার পাশে গাছের পাতার রং সবুজ থেকে লাল হয়ে গেছে। ফুলজোড় কলেজ মোড়ের দোকানদাররাসহ সড়কটির আশেপাশের মানুষ ঘরে বসে শান্তিতে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না । এলাকাটি ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে ৮-১০টি পয়েন্টে (ফুলজোড় কলেজ থেকে বকুলতলা ব্রিজ পর্যন্ত) কৃষি জমিতে স্তূপাকারে রেখে বেআইনিভাবে ব্যবসা চলছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব ব্যবসার পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ব্যবসা করে আসছে এবং বালুভর্তি খোলা ট্রাকগুলো এ সড়ক দিয়ে দাপিয়ে চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই।

ফুলজোড় ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদ আলী জানান, সড়কটি এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। বালুভর্তি খোলা ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জানান, বালুভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচলে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নাকে মুখে ধুলা ঢুকে শ্বাস কষ্ট, যক্ষা, হাঁপানী, চোখের সমস্যা, সর্দি ছাড়াও বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

ফুলজোড় ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আতিক জানায়, বালুর ট্রাকের কারণে সড়কটি দিয়ে হাঁটা যায় না। পায়ে হেঁটে আসতে গেলে আমরা ধুলাতে একাকার হয়ে যাই। সড়কটিতে পানি দেয়াসহ কর্তৃপক্ষকে ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানান তিনি।

পথচারী শফিক রহমান বলেন, এ সড়কে খোলা ট্রাকে বালু বহন করা পরিবেশের জন্য হুমকি এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।

একাধিক ভ্যানচালক ও অটোরিকশা চালক বলেন, প্রচণ্ড ধুলায় আমরা অতিষ্ঠ। মাঝে মাঝে ধুলা বালি কমাতে  সড়কে পানি দেয় তখন কাদায় পরিণত হয়। এতো কাদা হয় যে তখন আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। মানুষ কাদার কারণে হাঁটতে পারে না। সরেজমিনে এসে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবেন না আমরা কত কষ্টে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছি।

ফুলজোড় কলেজ মোড়ের দোকানদাররা বলেন, ধুলার কারণে দোকানে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা দোকানে এসে এক মূহুর্ত দাড়াঁতে চায় না। ফলে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেন।

(ঢাকাটাইমস/১মে/কেএম)