সেই ব্যারিস্টার রাজ্জাক এখন...

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ মে ২০২১, ২০:২৪

দুই বছর আগে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেন দলটির ‘থিংকট্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এরপর থেকে শুধু রাজনীতি নয়, সবকিছু থেকেই নিরুদ্দেশ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। দেশ ছাড়ার পর সাত বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন, এমন খবর জানা গেলেও সেখানে কী নিয়ে ব্যস্ত তা অজানাই ছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ করে ভার্চ্যুয়ালি দেখা গেল ব্যারিস্টার রাজ্জাককে।

জামায়াত ছেড়ে আসা একাধিক নেতার উদ্যোগে গঠিত আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিদেশ থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজ্জাক। সেখানে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।

রবিবার দলটির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টি সদস্য সচিব ও সাবেক জামায়াত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ব্যারিস্টার রাজ্জাককে পার্টির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে। আজ থেকে তিনি পার্টির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন।’

রাজধানীর বিজয় নগরের দলীয় কার্যালয় থেকে ২০২০ সালের ২ মে যাত্রা শুরু করে এবি পার্টি। জামায়াতের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি জামায়াতঘেঁষা অন্যান্য শ্রেণি-পেশার অনেকে যুক্ত হয়েছেন ইতিমধ্যে।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ‘ক্ষমা না চাওয়ায়’ ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন দলটির তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। দল ছাড়ার পর তিনি কোনো দলীর রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দুটি কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তা হলো- জামায়াত ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে এবং অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি।

লন্ডনে আইন পড়া রাজ্জাক ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্ট নেন। ওই সময় থেকেই তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তবে আইনজীবী হিসেবে রাজ্জাকের নাম আলোচনায় আসে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর।

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে তাদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়ান রাজ্জাক। জামায়াতে শীর্ষ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পাঁচ দিন পর ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজ্জাক ঢাকা ছাড়েন। ব্রিটিশ নাগরিকত্বধারী এই আইনজীবী সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন।

এসেক্সের বারকিং থেকে ঢাকায় পাঠানো ওই পদত্যাগপত্রে রাজ্জাক জামায়াতের তখনকার আমির মকবুল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিরোধিতা নিয়ে ক্ষমা চাওয়াসহ দলের সংস্কারের প্রস্তাব আমলে না নেয়ার অভিযোগ তোলেন।

রাজ্জাক লিখেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনো করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য। ক্ষমা চাইতে না পারলে দল বিলুপ্তিরও পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

পদত্যাগের সময় নিজের আইনি পেশায় ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে জামায়াত নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন এই আইনজীবী। পদত্যাগপত্রে ১৯৮৬ সালে জামায়াতে যোগ দেয়ার পর দলের ভেতর থেকেই সংস্কারের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে দাবি ছিল রাজ্জাকের। কিন্তু গত তিন দশকে সেসব প্রস্তাবের কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

উপদেষ্টা হিসেবে নাম ঘোষণার পর বক্তব্য লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবি পার্টিকে বেশ কিছু পরামর্শও দেন। রাজ্জাক বলেন, ‘এবি পার্টিকে যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, ঠিক তেমনি দলের ভেতরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশে মারামারি, হানাহানি ও বিভাজনের রাজনীতি, 'তারা এবং আমরা'- এই দুই ভাগে জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এবি পার্টি'র সংগ্রাম এই বিভাজনের বিরুদ্ধে। এবি পার্টিকে রাজনীতিতে পেশাদারিত্ব আনতে হবে। এবি পার্টিকে অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০২মে/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :