সাক্ষাৎকার

‘ভার্চুয়াল আদালতের সংখ্যা বাড়ানো উচিত’

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২১, ১১:৪৪ | আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ১৩:১৬

আসাদুজ্জামান
ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লিলি মমতাজ। সমাজকর্মী হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাতা সদস্যও তিনি। নারীদের উন্নয়নেও তার অবদান রয়েছে। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপচারিতায় কথা বলেছেন করোনাকালে আইন পেশা এবং সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান

সর্বাত্মক লকডাউনে বন্ধ রয়েছে আইন-আদালত। কেবল জরুরি ক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ফিজিক্যালি আদালত না বসার জন্য মামলাজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে কি না? মামলাজট নিরসনে  কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত?

লিলি মমতাজ: অবশ্যই মামলা জট তৈরি হবে বা হচ্ছেও। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউন চলছে  কিন্তু তাই দেশে অপরাধ তো থেমে নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় আসামী গ্রেফতার হচ্ছে। হাজারো সমস্যা নিয়ে এই সংকটের মধ্যে সময় পার করছে মানুষ। কিন্তু তারা যথেষ্ট আইনি সহায়তা পাচ্ছে না।

আমি মনে করি মামলা জট এড়াতে ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি ফিজিক্যাল কোর্টও খুলে দেয়া উচিত। 

ভার্চুয়াল আদালত কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে? ভার্চুয়ালের সুফল কতটা পাওয়া যাচ্ছে?

লিলি মমতাজ: ভার্চুয়াল কোটকে পুরোপুরি ভার্চুয়াল কোট বলা যায় না। কেননা, মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে প্রকৃত কোটে যেতে হচ্ছে। অফিস স্টাফদের অফিসে থাকতে হচ্ছে। এফিডেভিট, ওকালত নামায় স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা, পেপারস রেডি করা ইত্যাদি কাজের জন্য মানুষের সংস্পর্শে আসতেই হচ্ছে।

এখানে একটা কথা বললেই নয়, আইনজীবীদের জন্য চেম্বারে যেতেই হচ্ছে। এই ভার্চুয়াল সিস্টেমের সঙ্গে সবাই পরিচিত নয়, কিংবা ইউজ টু হয়ে উঠতে পারেনি অনেকেই। অনলাইনে আদালত পরিচালনার যে সিস্টেম সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে সময় লাগবে।

একজন ক্লায়েন্ট তার কাগজপত্র ফটোকপি করে পাঠাতে ঠিকই বাইরে ফটোকপির দোকানে যেতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দোকানপাট খোলা পাওয়াও কঠিন।  তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর যে ঝুঁকি, সেটা ভার্চুয়াল কোর্টে কতটা মুক্ত থাকা যাচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

যতই ভার্চুয়াল কোর্ট হউক একজন আইনজীবী পুরোপুরি ভার্চুয়াল হতে পারছে না। সব আইনজীবীর বাসায় ডিজিটাল ডিভাইস ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নেই।

ফিজিক্যালি আদালত বন্ধ। এতে করে আইনজীবীদের হাতে কাজও নেই। ফলে আর্থিক দুর্দশায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?

ফিজিক্যাল আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের হাতে ক্লায়েন্ট  নেই। বেশিরভাগের হাতেই কাজ নেই। অনেকেই গ্রামে চলে গেছে। বা পরিবার-পরিজনদের গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এসবের মূল কারণ অর্থ-সংকট। সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে। যাদের সঞ্চয় নেই তারা ধার দেনা করে বেঁচে আছে। 

এই দুর্দিনে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত সরকারের। পাশাপাশি আইন পেশার সংগঠনকেও। যেসব আইনজীবী করোনা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা সহায়তা সরকারকে দেয়ার দাবি জানাই। এবং করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া উচিত।

কোর্টের বেনিভোলেন্ট ফান্ড/কন্ট্রিবিউটরি ফান্ডের নূন্যতম ৫০ শতাংশ টাকা এই করোনাকালে আইনজীবীদের দেয়া হোক। আইনজীবীর জীবনকালে, প্রয়োজনের সময় যদি এই টাকা না পাওয়া যায় তবে সেই টাকা মৃত্যুর পরে তার কোন কাজে লাগবে?

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

লিলি মমতাজ: ঢাকা টাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৩মে/এজেড)