গন্তব্যে যেতে হবে তাই শেয়ারে ঝুঁকির যাত্রা!

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২১, ১৮:৩০ | আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ১৯:৩৫

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ পাড়ি দিতে লকডাউন তথা অবাধ যাতায়াতে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। এরপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নানামুখি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে।

বাস না চলায় যাতায়াতে সাধারণের অন্যতম বাহন হয়ে উঠেছে রিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা। বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশার বেশিরভাগই চলছে শেয়ারে যাত্রী পরিবহন করছে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রীপ্রতি নিজেদের মতো ভাড়া নির্ধারণ করে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন চালকরা।

অনেকটা নিরুপায় যাত্রী আরও কয়েকজনের সঙ্গে স্বাস্থ্য আর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ভাড়া ভাগাভাগি করে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কয়েকজন মিলে যাত্রায় ভাড়া কম পড়বে বলেও অনেকেই এভাবে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় দেখা গেছে, প্রতি সিএনজি অটোরিকশায় চারজন করে যাত্রী গাদাগাদি করে পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো সুযোগই এখানে থাকছে না। নগরবাসীর এমন যাত্রায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অজানা-অচেনা মানুষের সঙ্গে চলাচলের কারণে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে এসব যাত্রীদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কিন্তু এভাবে যানবাহনে চলাচল করলে সেগুলো মানার সুযোগ কোথায়? এতে তো ঝুঁকি বাড়ছে। যেখানে বাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে সেখানে গাদাগাদি করে চলাফেরায় কে কাকে আক্রান্ত করবে বলা মুশকিল।’

রাজধানীর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবাজার, পল্টন, নিউমার্কেট, শ্যামলী, কারওয়ানবাজার এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, চালকরা ডেকে ডেকে সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী তুলছেন। নিজেদের মতো ভাড়া নির্ধারণ করে তারা এক সিএনজিতে সামনে একজন ও পেছনে তিনজন যাত্রী পরিবহণ করছেন।

এদিকে ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজার এলাকায় দেখা গেছে, মূল সড়কে সারি সারি সিএনজি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন চালকরা। কোনোটাতে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে, কোনোটাতে আবার শেয়ারে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

সিএনজি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলিস্তান এলাকা থেকে এয়ারপোর্ট, উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। যদিও রিজার্ভ নিলে এর চেয়ে কম ভাড়ায় যেত এসব সিএনজি।

গুলিস্তান থেকে যাত্রী নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হওয়া সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অন্য সময় এয়ারপোর্ট ৩০০ টাকা ভাড়া ছিল। এখন একজন ১০০ করে চারজনে ৪০০ টাকা। লকডাউনে আমরাও ভাড়া পাইলাম, যাত্রীরাও যেতে পারল।’

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়, যা ‘কঠোর লকডাউন’ নামে পরিচিতি পায়। তখন থেকেই সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ আছে।

সম্প্রতি দোকান-পাট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হলেও রেলপথে ও গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন এখনো বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা। চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও জেলার মধ্যে ৬ মে থেকে গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।

 (ঢাকাটাইমস/০৩মে/ডিএম/জেবি)