প্রতারণার ফাঁদ: টং দোকান থেকে কোটিপতি ‘কয়েন’ সুমন

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২১, ১৯:১২ | আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ১৯:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একসময় ছিল কম্পিউটারের ছোট্ট দোকান। সেখানে বিক্রি করতেন শিশুদের কাপড় ও খেলনা। এরপর গড়ে তোলেন 'বেসিক বিজ' মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আউটসোর্সিং মার্কেটিংয়ের ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই চলছিল অবৈধ 'বিট কয়েন' ব্যবসা। এর মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ভার্চুয়াল ওয়ালেটে তার মজুদ রয়েছে বিট কয়েনে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার। এই চক্রের মূলহোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সোমবার ভোরে রাজধানীর বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এসময় তার দলের আরও ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আবুল বাশার রুবেল, আরমান পিয়াস, রায়হান আলম সিদ্দিকি, মো. জোবায়ের, মেহেদী হাসান রাহাত, মেহেদী হাসান, রাকিবুল হাসান, রাকিবুল ইসলাম, সোলাইমান ইসলাম, মো. জাকারিয়া, আরাফাত হোসেন। উদ্ধার করা হয়, ২৯টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, তিনটি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাবলেট ফোন ও নথিপত্র।

সোমবার বিকাল ৫টায় কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ইসমাইল হোসেন সুমন বিট কয়েনের মাধ্যমে গড়েছেন ফ্ল্যাট, প্লট, সুপার শপসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বেসিক বিজ মার্কেটিং নাম প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১ একটি দল। সেখান থেকে দেশে অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসার মূলহোতা ও অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কে এই সুমন

চক্রটির মূল হোতা ইসমাইল হোসেন সুমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন। ২০১৩ সালে ছোট্ট একটি দোকানে বাচ্চাদের খেলনা ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি শুরু করেন বিট কয়েনের ব্যবসা। গড়ে তোলেন বেসিক বিজ মাকেটিং নামক অনলাইন আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠান। আর এর আড়ালে অবৈধ বিট কয়েন ও অনলাইন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন।

এই ব্যবসার স্বত্বাধিকারী ও মূলহোতা সুমন শুরুতে একটি ছোট অফিস থাকলেও তা বড় হয়, বাড্ডায় তিনটি ফ্লোরে ৩২ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি শিফটে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ভার্চুয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে অবৈধ ও প্রতারণামূলক ব্যবসা বিট কয়েনের মাধ্যমে সুমন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ঢাকায় রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট, প্লট, সুপার শপের ব্যবসা।

র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার আল মঈন জানান, এক বছরে ১৫ লক্ষাধিক ডলার ভার্চুয়াল ওয়ালেটে লেনদেন সুমনের রয়েছে। যেখানে বিট কয়েনের মাধ্যমে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার মজুদ রয়েছে। গত এক বছরে তিনি বিট কয়েনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছেন। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত সুমন গ্রেপ্তার ইসমাইল হোসেন সুমন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ই-মার্কেটিং সাইটে আকর্ষণীয় মূলে বিজ্ঞাপন প্রদান করত।

তিনি আরও জানান, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করত। কেউ যদি তার পণ্য ক্রয় করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতো তা তিনি হ্যাক করতেন ও টাকা আত্মসাৎ করতেন।

বিট কয়েনে আন্তর্জাতিক জুয়ারিদের সাথে যোগাযোগ এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের  গণমাধ্যম মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে বিট কয়েন নিষিদ্ধ তবে বেশ কিছু দেশেই বিট কয়েন বৈধ। সম্প্রতি ভারতে এটা বৈধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও বৈধ। এসব দেশের সাথে লেনদেন রয়েছে বা দেশীয় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক জুয়ারিদের নিকট বিট কয়েন লেনদেন ও বিক্রি করতো সুমন।

(ঢাকাটাইমস/০৩মে/এসএস/জেবি)