স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করা হলো না শাহাদাতের

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২১, ২১:১১

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ শাহাদাত হোসেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে মার্স্টাস শেষ করে চাকরির জন্যে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরার সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পদ্মায় বাল্কহেড আর স্পিডবোটের সংঘর্ষে প্রাণ হারান।

শাহাদাত হোসেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের নেয়ামতকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

নিহতের পরিবার বলছে, উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের আদম আলী মোল্লার ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শাহাদাত হোসেন। সবার ছোট হওয়ায় তার পড়াশোনার দিকে পরিবারের সকলের নজর বেশি ছিল। আর শাহাদাতও মেধার স্বাক্ষর করে প্রতিটি ক্লাসে। পরিবার ধর্মীয় অনুশাসনে থাকায় আল-বাইনুল মামুর সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৪.৮১ পেয়ে দাখিল পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়। এরপর আর মাদ্রাসায় পড়াশোনা হয়নি। এইচএসসি পাস করেন শিবচর উপজেলার বহরামগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে। মানবিক শাখায় সেখানেও জিপিএ-৪.৪০। মেধাবী শাহাদাত এরপর ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে সরকারি চাকরির জন্যে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনও করে যাচ্ছিল শাহাদাত। এবার মহামারি করোনায় লকডাউন হওয়ায় আগে-ভাগে ঈদ করতে বাড়িতে আসছিল শাহাদাত। সেটা আর হলো না। সোমবারের বাল্কহেড আর স্পিডবোর্টের সংঘর্ষে প্রাণ গেল শাহাদাতের। শাহাদাতের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না পরিবার। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।

শাহাদাতের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সব আশা-ভরসা শেষ হইয়া গেল। আমরা অন্য ভাই-বোন বেশি পড়াশোনা করতে পারে নাই। আমাদের ছোট ভাই, কলিজার টুকরাকে পড়াশোনা করাইছি। সে বড় চাকরি করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেটা আর হলো না। এখন আমরা কি নিয়া বাচুম। শাহাদাতরে...।’

শাহাদাতের বন্ধু শাহিন মিয়া জানান, ‘ছোট থেকে শাহাদাত আর আমি বড় হইছি। ও অনেক মেধাবী ছিল। জগন্নাথ থেকে প্রথম শ্রেণিতে উর্ত্তীণ হয়েছে। এখন সরকারি চাকরির জন্যে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করছে। হয়ত করোনা না হলে চাকরি হয়েও যেত। এখন আর কোন পরীক্ষা দিতে হবে না। সব কিছুর ঊর্ধে।’

উল্লেখ্য, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা একটি স্পিডবোটের সাথে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত উদ্ধার হয় আরো পাঁচজন যাত্রীকে। নিহতের তালিকায় শিবচরের শাহাদাত হোসেনও ছিল।

(ঢাকাটাইমস/৫মে/এলএ)