ভারতে করোনা বিস্ফোরণের প্রধান কারণ

এইচ এম তারিকুল ইসলাম কাফী
 | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২১, ১২:৪৮

বিশ্বের অন্যতম কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী দেশ ভারত। সারা দুনিয়ায় যখন করোনা পরিস্থিতির দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে শংকিত, তখন মার্চ মাসের শুরুর দিকে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করলেন যে ভারত কোভিড -১৯ মহামারির উত্তরণের পথে। তিনি তাদের রাষ্ট্র প্রধান নরেন্দ্র মোদির প্রসংশা করে বললেন, ‘নরেন্দ্র মোদি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের কাছে রোল মডেল’।

তিনি তাদের তৈরি ভ্যাক্সিন নিয়ে বিশ্বে নতুন কুটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে ভ্যাক্সিন পাঠানো শুরু করেন।

কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই ভারতে করোনা ভয়ংকর রূপ নিতে শুরু করে। কিন্তু এতো আত্মবিশ্বাসের পতন কিভাবে ঘটলো, সেটাই এখন বিশ্লেষণের বিষয়।

আহমেদাবাদ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক চিন্ময় তুম্বে বলেছেন, সরকার ও সমাজের আত্মতুষ্টির কারণে ভারত দ্বিতীয় কোভিড-১৯ তরঙ্গের প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের উপর নজর রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি 'The Age of Pandemics: How They Shaped India and the World',' শীর্ষক বইটি তিনি রচনা করেছিলেন যাতে তুম্বে আরও বলেছেন, এই সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি প্রবাহের সম্ভাবনা সম্পর্কে ভারতকে কমপক্ষে আরও দুই বছর সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা গেছে বিষয়টিতে ভারত সরকার কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি। ফলে ঘটে যাচ্ছে বড় বিপর্যয়।

বিশ্লেষণ ধর্মী পর্যালোচনায় ভারতের এই সংকটের পেছনে যেসব কারণ বড় ভুমিকা ছিলো বলে মনে করা হয় তা তুলে ধরা হলো।

করোনা সংক্রমণ রোধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়াম বা আইএনএসএসিওজি নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম কাজ করছে। গত ডিসেম্বরে এটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বিজ্ঞানীরা প্রথম করোনার ভারতীয় ধরন (বি.১.৬১৭) শনাক্ত করতে সক্ষম হন বলে জানান আইএনএসএসিওজির সদস্য অজয় পারিদা। তিনি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব লাইফ সায়েন্সের পরিচালক।

এ ফোরামের একজন বিজ্ঞানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, মার্চের শুরুতেই সম্ভাব্য ভয়ংকর পরিণতির বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। তবে এসব সতর্ক বার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পৌঁছেছিল কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

এমন অবস্থায় ভারত সরকার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন না করে ফেব্রুয়ারির শেষে, ভারতের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ পাঁচটি রাজ্যে বিধান সভা নির্বাচনের ঘোষণা করে, যেখানে ১৮৬ মিলিয়ন মানুষ ৮৪৪ টি আসনে ভোট হওয়ার কথা। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক সমাগম ঘটান, যা ছিলো ভয়ংকর ঝুঁকি। এমন সমাগমে সয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অংশ নেন।

রয়টার্স বলছে, সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা এপ্রিলের শুরু থেকেই ভারতজুড়ে লকডাউন আরোপের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে অন্তত চারজন বিজ্ঞানী বলেছেন, ভারত সরকার তাদের সেই আহ্বান শোনেনি। উল্টো লাখ লাখ মানুষের মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সে দেশের আদালত করোনা বিস্তারের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করেছেন।

আরেকটি বিষয়কে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে অভিজ্ঞতা আলোকে করোনা মুকাবিলা না করে ভারত কোভিড-১৯ কে পুজি করে নতুন বাণিজ্য বলয় তৈরি করেছেন। ভারত নিজের দেশের ১ শতাংশ মানুষকে ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করতে না পারলেও দুরবর্তী দেশগুলোতে ভ্যাক্সিন বাণিজ্য করতে স্বচেষ্ট হয়। যা ছিলো জনগণের সাথে সরকারের কঠিন রসিকতা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা না করে দেশের ভেতর ব্যবসাকে উন্মুক্ত করে দেন।

ভারতের এই সংকটের জন্য এখন শুধু মাত্র ভারত নয় সারা বিশ্বই ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার অতি সংক্রামক ধরন সংকট তৈরি করতে পারে পুরো বিশ্বে। কেননা, এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ইরানসহ বিশ্বের অন্তত ১৭টি দেশে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার খবর মিলেছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ও আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

লেখকঃ পর্যটন পেশাজীবী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা