বিরামপুরে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা মাত্রা ২.১৪ শতাংশ, কৃষকদের অনাগ্রহ

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২১, ২০:৪২

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর

গত বছর সরকারিভাবে ধান কেনার লক্ষমাত্রা অর্জনে বিশাল অংকের ঘাটতি থাকলেও চলতি বছরে আবারও লক্ষমাত্রা অর্জনে অনেকটা ঘাটতির ঝুঁকি নিয়েই ধান সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস। গত বছর দুই হাজার ১৮৩ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষমাত্রার বিপরীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ৮০০ কেজি ধান কেনা হয়।

উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯৯ হাজার ৪৩৪ মেট্রিকটন। আর সরকারিভাবে এবার ধান কেনা হবে দুই হাজার ১৬১ মেট্রিকটন, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। এতে করে স্থানীয় ধানের বাজারে ভরা মৌসুমে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে এবং ধানচাষীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন।

গত বছর ধান কেনার লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার সঠিক ব্যাখা কর্তৃপক্ষের কেউ দিতে না পারলেও এলাকার ধানচাষীরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, গতবছর সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে প্রতিমণ বোরো ধান কেনা হয়েছে এক হাজার ৪০ টাকা দরে। খাদ্যগুদামে কৃষকের কাছ থেকে ১৪ শতাংশ আদ্রতায় শুকনা, ঝরঝরে ও চিটামুক্ত ধান নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়ি থেকে ভ্যান ভাড়া করে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গিয়ে লম্বা লাইন ধরে ধান দেয়া আবার কয়েকদিন পরে ব্যাংকে গিয়ে ধানের দাম আনা বড়ই ভোগান্তি।

অন্যদিকে স্থানীয় হাটে কাঁচাধান এক হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায় নগদে বিক্রি হয়েছে। আর এসব কারণেই গ্রামের কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী ছিলেন না। এবারও সেই ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখছেন ধানচাষীরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, উপজেলায় প্রান্তিক পর্যায়ে ২৫ হাজার ৫০০ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। এ বছর উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা নিয়ে ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ২৯, ৫৮, ৮১, ৮৮, ৮৯, জিরাশাইল, হাইব্রিড জাতের হীরা-টু, এসএলএইটএইচ, বলাকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির বোরো ধান চাষ হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ৯৯ হাজার ৪৩৪ মেট্রিকটন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যে এবার পরিমাণ ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি উৎপাদনের তুলনায় খুবই কম।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ২৮ এপ্রিল বিরামপুরের চরকাই খাদ্যগুদামে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান সংগ্রহের বিশেষ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। গত বছর সরকারের পক্ষ থেকে ধানের ক্রয়মূল্য ছিল কেজি প্রতি ২৬ টাকা আর এবার ২৭ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের বিপরীতে মাত্র দুই হাজার ১৬১ মেট্রিকটন ধান কেনা অতি নগণ্য। এতে করে উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব হবে না। তবে সরকারিভাবে ধান কেনার পরিমাণ আরও বাড়ানো হলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, উপজেলায় ধান কেনার বিশেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছয় দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত খাদ্যগুদামে উপজেলার কোনো ধানচাষী ধান বিক্রি করতে আসেননি।

এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, উপজেলাতে সরকারিভাবে এবার ২৭ টাকা কেজি দরে দুই হাজার ১৬১ জন তালিকাভুক্ত কৃষকের কাছ থেকে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৪মে/কেএম)