বিদেশ যাওয়া নিয়ে যা বললেন ওয়াসার এমডি

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২১, ১৯:২০ | আপডেট: ০৫ মে ২০২১, ১৯:৪০

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

চলমান করোনা মহামারির মধ্যে তিন মাসের জন্য দেশ ছেড়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহল থেকে। তিনি নিয়ম না মেনেই দেশ ছেড়েছেন বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, নিয়ম মেনে এবং বৈধভাবেই তিনি দেশের বাইরে গেছেন।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তাকসিম এ খান জানান, সরকারি চাকরি প্রবিধানমালার নিয়মে নয়, বরং তার বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও ছুটির বিষয়টি ‘ওয়াসা বোর্ড, ওয়াসা আইন’ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ হয়।

বিদেশ যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই আমি ছুটি নিয়ে আমেরিকাতে আসি। আমার কিছু রুটিন চেকআপ এবং বাকিটা হচ্ছে আমার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। গত বছর আমি কিন্তু আসতে পারিনি। যেহেতু কোভিডের সময়, ওই সময় কোনো মুভমেন্ট ছিল না। ফ্লাইট ছিল না। এজন্য এবার প্রায় দুই বছর পরে এলাম। বেশকিছু মেডিকেল ইস্যু আছে। তাই একটু লম্বা সময়ের জন্য আমি অবস্থান করব।’

বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়াটি যথাযথ আইন মেনে হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের যারা ক্যাডার সার্ভিস ও নন ক্যাডার সার্ভিস অর্থাৎ সচিব, যুগ্ম-সচিব, সহকারী সচিব তারা সরকারি চাকরি প্রবিধানমালার আওতাধীন। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা তাদের ছুটি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সরকারি চাকরি প্রবিধানমালা। আমারটা হচ্ছে ওয়াসা আইন ১৯৯৬ এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমার বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা এই আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমি রিপোর্ট দেব ওয়াসা বোর্ডের কাছে। বোর্ড আমাকে ছুটি দেয়ার অথরিটি। এবং বোর্ড আমার বেতন-ভাতা নির্ধারণ করার অথরিটি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করার অথরিটি।’

ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দিষ্ট ছুটি বলতে কিছু নেই। প্রয়োজনে বোর্ড সময় সময় তাকে ছুটি দিতে পারে এবং সে ছুটিতেও তিনি আংশিক নিজে কাজ করতে পারেন অথবা অন্য কাউকে আংশিক দায়িত্ব দিতে পারেন। তবে সে ছুটিতেও কাজ করতে হবে ওয়াসার এমডিকে।

এক্ষেত্রে কী প্রক্রিয়ায় ওয়াসার কার্যক্রম চলছে জানতে চাইলে তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসা আইনে বলা আছে, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। আমি কোনো কারণে কাউকে দায়িত্ব অর্পণ করতে চাইলে আমার শর্তে কিছু কিছু দায়িত্ব অর্পণ করতে পারব। যেমন ধরেন, আমি যদি কোনো সময় অসুস্থ থাকি বা আমি যদি কাজ করতে না চাই বা আমার পক্ষে সম্ভব না হয়, আমি কাউকে দায়িত্ব দেবো। সেটা হচ্ছে ওয়াসার ২৮ এর ১০ উপধারা অনুযায়ী। বোর্ডের অনুমতি নিয়ে আমি আমার দায়িত্ব কাউকে অর্পণ করতে পারি।’

ঢাকা ওয়াসা আইন-১৯৯৬ অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সরকারের অনুমোদনক্রমে বোর্ড কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী। তার চাকরি ওয়াসা আইন-১৯৯৬ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করবেন। দায়িত্ব পালন, সুযোগ সুবিধা এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী বোর্ডই নির্ধারণ করবে। সরকারি চাকরির বিধিবিধান তার জন্য প্রযোজ্য হবে না।

আইন অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড এবং সংস্থার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই তিনি দেশের বাইরে গেছেন বলে জানিয়েছেন ওয়াসা এমডি। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ওয়াসা আইন আছে, সে অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড থেকে অনুমোদনটা নিয়ে এসেছি। যেহেতু আমি সংস্থার প্রধান তাই দেশের বাইরে যেতে সরকারপ্রধানের অনুমোদন লাগে এবং সেটাও নেয়া আছে। সুতরাং আমি যথারীতি নিয়মের মধ্যেই দেশের বাইরে অবস্থান করছি।’

গত কয়েক বছর ধরেই ওয়াসার কার্যক্রম ৯০ ভাগ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে বলে জানান ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি দেশের বাইরে থাকাকালে যাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন ওই কর্মকর্তা ওয়াসার এমডির পক্ষে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হবেন। তবে যেসব ক্ষেত্রে ওয়াসার এমডির অনুমোদন প্রয়োজন সেসব ক্ষেত্রে ই-নথি, ই-মেইল ব্যবহার করে কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তাসকিম এ খান।

ওয়াসার এমডি বলেন, ‘বর্তমান যুগ হচ্ছে ইলেকট্রনিক/ ডিজিটাল যুগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সমন্বয় করে ২০১২ সাল থেকে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা ওয়াসা ডিজিটাল ওয়াসায় পরিণত হচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রায় সব কাজই ডিজিটালি করা সম্ভব। ঢাকা ওয়াসা শতকরা ৯০ ভাগ ডিজিটাল। আজকে না, এটা গত বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। কাজেই আমি কোনো ফাইল ম্যানুয়ালি সাইন করি না, আমার সাইন হচ্ছে কম্পিউটারে/ডিজিটালি। এগুলো ই-নথি। এটা সরকারের একটি অ্যাপস। আমাদের সমস্ত ফাইল, টেন্ডার যেগুলো হয় সবই ডিজিটাল। আমার পর্যন্ত যেটা আসার কথা সেটা আমার কাছে চলে আসে। প্রায় কোনোকিছুই আমাদের এখন আর ম্যানুয়াল নেই। সবকিছুই ভার্চুয়ালি করা সম্ভব।’

(ঢাকাটাইমস/৪মে/কারই/জেবি)