অনুমতি পেলে খালেদা জিয়া লন্ডন যাবেন?

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২১, ১৪:২৫ | আপডেট: ০৬ মে ২০২১, ১৮:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন সরকার গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ধারণা করা হচ্ছে, সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে বিদিশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দিতে পারে। 

বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেলে কোন দেশে যাবেন বেগম খালেদা জিয়া? দু-তিনটি বিকল্পের মধ্যে যুক্তরাজ্যের লন্ডন প্রথম পছন্দ বলে আলোচনা আছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। লন্ডনে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবস্থান করছেন। ছেলের কাছাকাছি থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী । 

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রাথমিক চিন্তা রয়েছে। কারণ এর আগেও সেখানে তার চিকিৎসা হয়েছে। তাছাড়া ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীও সেখানে আছেন। ছেলের স্ত্রী একজন চিকিৎসক। তিনিও চাইছেন খালেদা জিয়াকে সেখানে নিতে। 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনকে প্রাথমিকভাবে লন্ডনে নেওয়া কথা ভাবা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের বিষয়টিও পরিকল্পনায় রেখেছে তার পরিবার। যদি লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ না হয় সে ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তার বিষয়টি তারা বিবেচনা করবেন। 

বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় বোনকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন নিয়ে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর। ওই রাতেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আবেদনটি গ্রহণ করেন। তিনি জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। 

আবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে।’

এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আবেদন দেওয়ার আগে থেকেই আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি চলছিল বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যারা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন তাদের পাসপোর্ট, ভিসাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে তার পরিবারের বোঝাপড়া অনেকটা এগিয়েই ছিল। আবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর ইতিবাচক ইঙ্গিত থেকেও বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট।   

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়া এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৭ এপ্রিল তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার ভোর থেকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় বিকালে তাকে হাসপাতালের কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।    

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেত্রীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার অক্সিজেন লেভেল ওঠানামা করছে। তিনি উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিসে ভুগছেন বলেও জানান চিকিৎসকরা।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। বিএনপিপ্রধান ছাড়াও তার বাসার আরও আটজনের করোনা পজিটিভ আসে। যদিও ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে দুই দফা পরীক্ষার পরও এখনো খালেদা জিয়ার নেগেটিভ আসেনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। উচ্চ আদালতে আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। 

২৫ মাসের বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। তারপর থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’আছেন। এরই মধ্যে আরও দুই দফায় ছয মাস করে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।

(ঢাকাটাইমস/৬মে/এইচএফ/মোআ)