রাস্তায় সেই চেনা হুড়োহুড়ি গা ঘেঁষা ভিড়

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২১, ১৯:১৯ | আপডেট: ০৬ মে ২০২১, ২০:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

২২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে ঘুরতে শুরু করেছে গণপরিবহনের চাকা। তবে সড়কে গণপরিবহন নিয়ে নামতেই স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। মুখে মাস্ক নেই, হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও নেই। নেই যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর। যদিও পরিবহন চালুর আগে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

 

বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীর মিরপুর রোড, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মগবাজার, শাহবাগ, পুরান ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের এ চিত্র দেখা গেছে।

সড়কে গণপরিবহন চালাতে বিআরটিএর নির্দেশনায় বলা হয়েছিল-

*আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের (৫০%) বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না।

 

*কোনোভাবেই সমন্বয়কৃত ভাড়ার (বিদ্যমান ভাড়ার ৬০% বৃদ্ধি) অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। *ট্রিপের শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালক, অন্যান্য শ্রমিক কর্মচারী ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

কিন্তু রাজধানীর ভেতরে আজ অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন চালুর পর দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালনের নজর নেই। চালক ও চালকের সহকারীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি অধিকাংশ স্থানে। পরিবহনগুলোতে হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও তা যাত্রীদের সেভাবে দেয়া হচ্ছিল না। তবে, গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে যাত্রী চাপ তেমন দেখা যায়নি। আসন খালি রেখে চলাচল করতে হয়েছে পরিবহনগুলোকে।

 

অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনভর বাসের তুলনায় যাত্রী ছিল কম। তবে অনেকেই বাসেই আবার আসন ফাঁকা রেখে নয়, বরং বাসের প্রতিটি আসনে যাত্রী নেয়ার চিত্র দেখা গেছে। আবার বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী এবং বাসে ওঠার সময় তাড়াহুড়ো ও সামাজিক দূরত্ব ভেঙেছে আগের মতোই।

 

এদিকে গণপরিবহন চালু হলেও গত ২২ দিনে রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশায় করে লেগুনার মতো যাত্রী পরিবহন দেখা গেছে বৃহস্পতিবারও। আর লেগুনাগুলোতে ৬ আসনের মধ্যে ৪ আসনে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তবে অল্প জায়গায় মুখোমুখি আটজন যাত্রী বসার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন। তারমধ্যে লেগুনার চালকের সহকারী, চালক এমনকি যাত্রীদেরও অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

 

হিমাচল পরিবহনের চালকের সহকারী মানিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেকদিন পর গাড়ি চলতাছে। এইডা আমগো জন্য খুশির বিষয়। এই কয়দিন খুব সমস্যায় ছিলাম। এখন নিয়ম কানুন মাইনাই আমরা গাড়ি চালাইতে চাই।’

সকালে অফিসমুখী যাত্রী হেলাল খানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবহন বন্ধ থাকলেও আমাদের অফিস খোলা ছিল। যাতায়াতের প্রচুর সমস্যা হয়েছে। বেশি ভাড়া দিয়ে অথবা শেয়ারে যাতায়াত করেছি রিকশা এবং সিএনজিতে। আবার কোনো কোনো পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করেছি। আজ থেকে গণপরিবহন চালু হয়েছে। অনেকটা উপকৃত হয়েছি আমরা। আমাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।’

 

এদিকে সড়কে পরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও সে তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা ছিল সীমিত। ফলে অধিকাংশ আসন ছিল ফাঁকা। বাসগুলো বাসস্টপে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল দীর্ঘ সময়।

 

গত ২২ দিন সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী যানবাহন, মোটরসাইকেল,  সিএনজি অটোরিকশা ও পায়ে চালিত রিকশার দখলে ছিল রাজধানী। এ সময় নগরে প্রতিদিনই যানজটের চিত্র দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে সড়কে আবার যুক্ত হলো গণপরিবহন। সব মিলিয়ে রাজধানীর সড়কের গাড়ির চাপ ছিল অনেকটা বেশি।

ঢাকাটাইমস/৬মে/আরকে/কারই