আবরার হত্যা মামলা: জেনে নিন সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২১, ১২:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
আবরার ফাহাদ

চাঞ্চল্যকর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার সর্বশেষ অবস্থা কী? মামলার দায় থেকে রেহাই পেতে আসামিদের সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা কত? আদালত কতজনকে সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন? কতজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন? মোট সাক্ষী কতজন? মামলার নানা দিক নিয়ে জানতে ঢাকা টাইমসের কথা হয় এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবীর সঙ্গে।

দেশজুড়ে আলোচিত আবরার হত্যা মামলা মোটামুটি নিয়মিত গতিতেই এগোচ্ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি এসে বাধ সাধে তাতে। এখন করোনায় আটকে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুযেট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারকাজ।

এ মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয় গত ৩০ মার্চ। এরপর ১৮ এপ্রিল মামলাটিতে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গত ৫ এপ্রিল সরকার অফিস-আদালত, গণপরিবহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে। তাতে আদালত সীমিত পরিসরে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আটকে যায় এ মামলার পরবর্তী কার্যক্রম।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬০ জন। তার মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এখন এ মামলায় দুজন আসামি তাদের পক্ষে চারজন সাফাই সাক্ষী দিতে আবেদন করেন আদালতের কাছে।

সাফাই সাক্ষী হলো আসামির পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেয়া। তবে এ চারজন সাফাই সাক্ষীর মধ্যে কতজনকে গ্রহণ করা হবে সেটি নির্ভর করছে আদালতের ওপর। গেল ১৮ এপ্রিল সাফাই সাক্ষী প্রসঙ্গে শুনানির কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ হওয়ায় সেটি আর হয়নি।

প্রশান্ত কর্মকর আরও বলেন, ‘করোনা স্বাভাবিক হওয়ার পর যখন আদালত খুলবে, তখন হয়তো মামলাটির গতি ফিরে আসবে। এ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

এর আগে গত ১৪ মার্চ এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্য দিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা শেষ হয়।

এরপর ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৩০ মার্চ দিন ধার্য করেন। ওই দিন দুজন আসামি তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী হিসেবে চারজনের নাম আদালতে দাখিল করেন, যার শুনানির জন্য ১৮ এপ্রিল দিন নির্ধারিত ছিল।

আবরার হত্যা ঘটনা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তাকে কয়েক দফা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে দেয়া হয়। এরপর রাত তিনটার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

পরে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। তদন্ত করে এজাহারবহির্ভূত রয়েছেন ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ ও এজাহারের বাইরে ৬ জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ৮ জন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

এ মামলার তিনজন আসামি এখনো পলাতক আছেন। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আসামি।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় কারাগারে থাকা ২২ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা, আব্দুস সোবহান তরফদা,মো. মিজানুর রহমান, নাসিমা বেগম, প্রশান্ত কুমার প্রমুখ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন মো. আমিনুল গনি টিটু, মো. ফারুক আহমেদ ও মো. রেজাউল করিম সরকার, মো. নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান দুলু (অ্যাডভোকেট), পলাতক আসামিদের পক্ষে মো. বদিউল আলম ভুইয়া প্রমুখ।

রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছেন, তারা এ মামলায় যথাযথভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে তারা আশা করেন।

(ঢাকাটাইমস/এআইএম/মোআ)