স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আলোকবর্তিকার প্রত্যাবর্তন

ইলিয়াস সানি
 | প্রকাশিত : ০৭ মে ২০২১, ১৬:০৬

পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত এমন দৃষ্টান্ত আর দ্বিতীয়টি নেই, যেখানে পিতা এবং কন্যা দুজনই আমৃত্যু পরিবারকে মৃত্যুর স্বাদ দিয়েছেন ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে যেয়ে। যেখানে পরিবার ও আত্মীয় মিলিয়ে প্রায় ২৬ জনের অসহনীয় মৃত্যুর নৃশংস ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। মুজিব এবং মুজিব কন্যা এখানেই অনন্য।

আমৃত্যু লড়াকু মানসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্তের নামও মুজিব। যিনি কিনা, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন এক ব্যক্তিত্ব- একটা দেশকে দুবার স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পিছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো যার। এবং ভিন্ন দু-দেশের রাজনৈতিক কারাবন্দীও ছিলেন। সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি পিতার রক্তের যোগ্য উত্তরসূরী, একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পূণ্যভূমি টুঙ্গিপাড়া। যেই টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম ও বেড়ে উঠেছিলেন একজন রাজনৈতিক কবি মুজিব। সেই সুশীতল ছায়াচ্ছন্ন টুঙ্গীপাড়ার নিজ ভিটেমাটিতে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় আরও এক আলোকবর্তিকার। যেই আলোর প্রজ জ্বলন শুরু হয়েছিলো পিতা মুজিবের জন্মের মাধ্যমে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চে। ঘাতকরা হয়তো ভেবেছিলো পিতা মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে সেই আলোর দ্যুতি বন্ধ করে দিবে।

কিন্তু না! যে দীক্ষা পিতা মুজিব তাঁরই রক্তের যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনাকে দিয়ে গেছেন, এই আলোর প্রস্ফুটন মুজিবের হাসু ছড়িয়ে যাচ্ছেন দিগ্বিদিক। জীবিত মুজিবের চেয়েও ঢের বেশি করে অনুভূত করাচ্ছেন মুজিব কন্যা হাসু।

পিতা তাকে শান্তিপ্রিয় জাীবন দিতে পারেন নি, কিন্তু নিজের শৃঙ্খলা, একাগ্রতা ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। ঠিক এই মন্ত্রমুগ্ধ বাণীই একজন মুজিব কন্যাকে বিশ্ব কন্যায় তুলে ধরেছেন সমশ্বরে। পিতার লড়াকু জীবনের শেষটা প্রিয় হাসু বয়ে বেড়াচ্ছেন বীরদর্পে।

২০০৭ সালের পূর্বেই শেখ হাসিনাকে মোট ১৬ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায়- ৭ মে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে একটি স্মরণীয় দিন। ২০০৭ সালের ৭ মে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত জরুরি অবস্থা চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে শত প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সে সময় শেখ হাসিনা যাতে দেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অবৈধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সাহসী শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকারের বেআইনি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশে ফেরার ঘোষণা দেন। অবৈধ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক দৃঢ়তা, সাহস ও গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর চাপে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। ৭ মে শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে এলে লাখো জনতা তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে মিছিল শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে আসা হয়। দেশে ফিরে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শুরু করেন নতুন সংগ্রাম।

দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগও করেছিলেন স্বৈরশাসকের আমলে। কারা অন্তরীণের সময়ও খাদ্যে স্লো পয়জনিং এর মাধ্যমেও তাকে হত্যাচেষ্টা চলে। তবুও গণতন্ত্রকামী শেখ হাসিনা আপোষ করেননি।

১/১১ তে প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের নামে রাজনৈতিক বিভাজনের দেয়াল তৈরির অপচেষ্টা করেছিলো একটা শ্রেণী। এই তৃতীয় শক্তির আস্ফালন আমরা ক্ষণেক্ষণে দেখেছি ইতিহাসের পাতায়।

প্রকৃতপক্ষে ১/১১ সরকার এসেছিল বিএনপি সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসনের কারণেই। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করা হচ্ছিল। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে এক এগারোর সৃষ্টি হয়েছিল। যার কারনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও একটা কালো দাগ শেখ হাসিনার দেশে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা ও পরবর্তীতে কারাভোগ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথাকথিত রাজনৈতিক সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিলো, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা।

ক্ষমতাগ্রহণের শুরুতে তাদের ব্যাপক জনসমর্থনের পিছনেও আছে জনসাধারণের ২০০১-০৬ সময়কার দুঃশাসনের নিগ্রহের অনুভূতি। যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তৎকালীন সেনা প্রধান (যিনি কিনা বিএনপির আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত) মইন ইউ আহমেদ এর লেখায়। তিনি বর্ণনা করেন, "আমি দেশকে লাইন-চ্যুত ট্রেনের সাথে তুলনা করেছিলাম । আমরা ট্রেনটিকে লাইনে উঠিয়ে তার প্রকৃত চালক রাজনীতিবিদদের হাতে দেশকে তুলে দিতে সহায়তা করেছি।"

এতো সত্ত্বেও শেখ হাসিনা পিতা মুজিবের সোনার বাংলার বর্ণীল নাটাই ছাড়েননি। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও, বাংলার মানুষকে সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন বারংবার।

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :