‘পাকিস্তান’ নাম ঘোচাতে ‘বঙ্গবন্ধু নাইট স্টোর’

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২১, ১১:৫২

পাকিস্তান নাম ঘোচাতে শেরপুরে জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত একটি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু নাইট স্টোর’ নামে দোকান খুলে আলোচনায় এসেছেন হারুন অর রশিদ (৩৪) নামে এক দরিদ্র যুবক।

হারুন জানান, সদর উপজেলার বাজিতখিলার মধ্যকুমরী গ্রাম জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের জন্মস্থান। ৭১’এ গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আদালতের রায়ে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ওই নেতার অনুসারীরা স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত পোস্টার টাঙাতে দিত না। শুধুমাত্র বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রচারণার পোস্টারে দেখা যেত জাতির পিতার ছবি। এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি বড় আকারে ছাপিয়ে তিনি নিজের দোকানের নামকরণ করেছেন। এ কারণে জামায়াত সমর্থকরা তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকিও দিয়েছেন।

হারুন বাজিতখিলা গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে।

এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক হারুন জানান, তিনি তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তৃতীয়। বাবা আনেক দিন আগেই মারা গেছেন। বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অন্য দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন বৃদ্ধ মা’সহ তার পাঁচজনের সংসার।

জীবিকার তাগিদে ছোট বেলায় তিনি গাজীপুরের শফিপুর চলে যান। সেখানে এসএস ফুটওয়্যার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ দিন জুতা তৈরির কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কাজের অবসরে কারখানার পাশে থাকা আওয়ামী লীগের অফিসে গিয়ে সময় কাটাতেন। সেখানে আসতেন কালিয়াকৈর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন সরকার এবং সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেলসহ অনেকেই। ওইসব নেতাদের বক্তব্য শুনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন। ধীরে ধীরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।

এছাড়া গাজীপুরের ভোটার হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের (বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী) পক্ষে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। সে সময় নেতার বক্তব্য থেকে অজানা অনেক তথ্য জানতে পেরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর হয়। ওই সময়ে মোজাম্মেল হকের নির্বাচনী বুথে এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

হারুন বলেন, কারখানায় কাজ করে জমানো দেড় লাখ টাকা নিয়ে গত ৫ বছর আগে নিজ গ্রামে চলে আসি। এরপর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মধ্যকুমরী গ্রামের বাজিতখিলা গাজীরখামার রোডে প্রথমে রাস্তার পাশে একটি টং দোকান দেই। পরবর্তীতে মাসিক ৬০০ টাকায় একটি ঘর ভাড়া নেই। পরে সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু নাইট স্টোর’ নামে মনোহারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। দোকানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হয়। এর লাভের অংশ পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকা ও জীবন জীবিকা নির্বাহ হয়। সেই সাথে ব্যবসার মুনাফা থেকে প্রতিদিন ৭০-১০০ জন মুজিব ভক্তদের বিনামূল্যে চা পান করান। এছাড়া করোনার সময়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যারা মাস্ক ছাড়া দোকানে এসেছেন চা পান করতে, তাদের বিনামূল্য মাস্ক দেই।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক পরে আমার জন্ম। এ দেশে যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হতো, তাহলে এ দেশ কখনো স্বাধীন হতো না আর আমরাও স্বাধীনতা পেতাম না। অথচ আমি যে ইউনিয়নে বসবাস করছি এটি জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। ৭১’এ গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের জন্মস্থান এ গ্রামেই।

ফলে এ গ্রামটির আরো একটি অলিখিত নাম রয়েছে দ্বিতীয় পাকিস্তান। এ নামটি আমি ঘোচাতে চাই। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর নামে দোকান খুলেছি। আজীবন চেষ্টা চালিয়ে হলেও এ গ্রামটি জামায়াত-শিবিরমুক্ত করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর নামে দোকান খোলার কারণে স্থানীয় জামায়াত নেতারা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়েছে জানিয়ে হারুন বলেন, আমি তাদের কথার প্রতিবাদ করে বলেছি এটা গণতান্ত্রিক দেশ। তোমরা যেমন জামায়াতকে সমর্থন করো- আমিও তেমনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি। দলের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত।

হারুন জানান, এবারই প্রথম বাজিতখিলা ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসাবে বিজয়ী হয়েছেন। প্রার্থী আমের আলী সরকার দলের জন্য ভোট না চেয়ে তার ব্যক্তি ইমেজের কারণে সকলের কাছে ভোট চাইতে বাধ্য হন। এর আগে তিনি এ এলাকা থেকে চারবার নির্বাচন করে ফেল করেন।

বঙ্গবন্ধু নামের পাশে নাইট শব্দ রাখার কারণ জানতে চাইলে হারুন বলেন, এ এলাকায় অনেক রাইস মিল রয়েছে, ওইসব মিলে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক দিন ও রাতে কাজ করে। কাজের অবসরে রাতে শ্রমিকরা দোকানে চা ও পাউরুটি খেতে আসে। এ কারণে বঙ্গবন্ধু নামের পাশে নাইট শব্দ যোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আগামীতে বঙ্গবন্ধুর নাম এ এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মনে গেঁথে দিতে নানা পরিকল্পনা রয়েছে তার। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে তার ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত টি-শার্ট তৈরি করে এলাকায় পর্যায়ক্রমে সকলের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করবেন বলে জানান তিনি।

বাজিতখিলা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমের আলী সরকার বলেন, হারুনের দোকান আমি উদ্বোধন করেছিলাম। তিনি ওই যুবকের উদ্দেশের সফলতা কামনা করেন।

হারুনের দোকানে মাঝে মধ্যে গিয়ে চা পান করেন জানিয়ে সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আল হেলাল বলেন, তার উদ্দেশ্যটি মহৎ।

(ঢাকাটাইমস/৮মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :