করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধি নিষেধ অব্যাহত রাখতে হবে

মো. শাহিন রেজা
 | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২১, ২০:০৯

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল আগস্ট মাস পর্যন্ত। সরকার লকডাউন ও নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমাতে চেষ্টা করে। লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেশের মানুষ। সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে গরীব অসহায় মানুষের পাশে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করার। এর পরো অনেকে চাকরি হারিয়ে, কর্মের অভাবে শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসেছে। সরকারের নানা চেষ্টায় গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে সংক্রমণের হার নিম্ন মুখি হয়।

এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। গত শীত মৌসুম থেকে শনাক্তের হার কমতে থাকায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি মানতে অনিহা দেখা দেয়। ফলে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দৈনিক শনাক্তের হার আবারও বাড়তে থাকে। গত ৭ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয় (৭৬২৬ জন)। অনেক দিন ধরে শনাক্তের হার ২২-২৩ শতাংশের উপরে ছিল। ফলে সরকার শনাক্তের হার কমাতে আবারো লকডাউন ঘোষণা করে যা এখনো বিদ্যামান।

বর্তমানে শনাক্তের হার ১০ শতাংশে নিচে। ফলে বলাই যায় লকডাউন ও বিধি নিষেধ করোনা শনাক্তের হার কমাতে সহায়তা করেছে। কিন্ত লকডাউনের ফলে অনেক দিন ধরে বাস, রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ ছিলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমা রেখা নিচে বাস করে। নিম্ন মধ্য বিত্ত ও দারিদ্র্য পরিবারের দুঃখ দূর্দশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ দিন এভাবে চলতে থাকলে দারিদ্র্যের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে, অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাই সরকারকে স্বাস্থ্য বিধির মানার উপরে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য বিধি মেনে সমস্ত কার্যক্রম চালাতে হবে। দেশে মানুষের স্বাস্থ্য বিধি মানতে এক ধরনের উদাসীন ভাব লক্ষ করা যায়। দীর্ঘ দিন লকডাউন থাকলে সরকারের পক্ষে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কষ্টকর হবে। ইতোমধ্যে করোনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকার চীন ও রাশিয়া সাথে চুক্তি করেছে তাঁদের দেওয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে টিকা উৎপাদনের। যত দিন পর্যন্ত সবাইকে টিকার আওতায় আনা না যাচ্ছে ততদিন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমাতে। বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাতে-

১। এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ফলে প্রতি জুম্মার দিন মসজিদে স্বাস্থ্য বিধি মানার গুরুত্ব তাগিদ দিয়ে বয়ান দিতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষ ধর্ম গুরুদের কথা মেনে চলে। এ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের গুরুদেরও তাদের ভক্তদের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি পালনের তাগিদ দিতে হবে। এ ক্ষেতে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

২। শহর/ গ্রাম/ মহল্লার সুধী জন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ওয়ার্ড মেম্বারা মিলে একটি কমিটি করতে পারে যারা মানুষকে মাস্ক পরা, বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া সহ স্বাস্থ্য বিধি পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করাবে। এ ক্ষেত্রে স্ব স্ব উপজেলার ইউএনও, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

৩। অসহায় ও দুস্থ মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের খাদ্য ও আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা। যার ফলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে এবং এর মাধ্যমে তাঁদের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি পালনের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।

৪। করো মাঝে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শের ব্যবস্থা করা এবং ঐ পরিবারকে বোঝাতে হবে এক জন কর্মক্ষম মানুষ অসুস্থ হলে পরিবারের উপর কতটা প্রভাব পড়ে। ফলে তাঁরা যেন সরকারের দেওয়া বিধি নিষেধ মেনে চলে।

৫। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করা।

৬। মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মানাতে আরো কঠোর হওয়া, প্রয়োজনে জরিমানা সহ নানা ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৭। জন সচেতনতা তৈরিতে সরকারের বিশেষ টিম গঠন করা। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে ও বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের উপর কঠোর আইন প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা।

সর্বোপরি সরকার ও মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনার প্রদুর্ভাব কমিয়ে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য বিধি পালনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এমনটাই ধরে নেওয়া হয়। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, নাগরিক সংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৮মে/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা