আইনের দৃষ্টিতে মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২১, ২১:১৮ | আপডেট: ০৯ মে ২০২১, ২০:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গুলশানের ফ্ল্যাটে তরুণী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা নিয়ে অন্ত নেই আলোচনার। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা তথ্য এবং পরে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বাদীর বক্তব্য নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান এই মামলার বাদী। কিন্তু তিনি এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন এবং পরে গণমাধ্যমে যেসব বিষয় তুলে ধরছেন তাতে তথ্যের গরমিলও স্পষ্ট হচ্ছে।

এছাড়া মুনিয়ার ভাই যখন বিষয়টিকে হত্যা উল্লেখ করে ফের আদালতে মামলার আবেদন করলেন তখন বিষয়টি মোড় নিল অন্যদিকে। আইনজীবীরা বলছেন, মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার পর বোন ওই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার আগে তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন এটি আত্মহত্যা? আবার মুনিয়ার ভাই বলছেন এটি হত্যা। তাহলে কোনপক্ষ ঠিক বলছেন? আসলে আইনের চোখে মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা কতটা যৌক্তিক?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে। আইনজীবী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গুলশানের মুনিয়ার নিহতেন ঘটনায় পর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেটি মিডিয়ায় এসেছে। আসলে মুনিয়া নিহত কেন হলো, সেটি কিন্তু প্রমাণ হবে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর। ময়নাতদন্তে যদি প্রমাণ হয় কেউ তাকে প্ররোচনা দিয়েছে, এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তখন ওই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেবে পুলিশ। আর যদি মুনিয়ার মৃত্যু অন্য কারণে হয় বা তাকে হত্যা করা হয়, তখন মামলায় নতুন মোড় নেবে। কাজেই এ ঘটনাটি আগেই ঢালাওভাবে বলা যাবে না আত্মহত্যার প্ররোচনায় মুনিয়ার মৃত্যু হয়েছে।’ 

জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্য হলে সেটা হত্যা কি আত্মহত্যা তা মৃত ব্যক্তির সুরুতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নির্ধারন করতে হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

অন্যদিকে আত্মহত্যা করলেও যার নিয়ন্ত্রণে ছিল বা  যার  জ্ঞাতসারে আত্মহত্যা করেছে সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী তাকেই ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন সে আত্মহত্যা করছে। ব্যর্থতায় তাকেই  এ মৃত্যুর জন্য দায়ী করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তবে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম বললেন ভিন্ন কথা। তার মতে মুনিয়ার ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা ঠিক আছে। তিনি মনে করেন, বাদীনি মুনিয়ার বোন থানায় যে মামলাটি করেছেন সেটি এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মামলার মোড় কোন দিকে যাবে সেটি ভিন্ন বিষয়।

গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের এক ফ্ল্যাটে মুনিয়ার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পায় পুলিশ। মুনিয়া ঢাকার একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পুলিশ জানায়, মুনিয়ার বাড়ি কুমিল্লা শহরে, তার পরিবার সেখানেই থাকে। তিনি এখানে থেকে পড়াশোনা করতেন। ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।

এদিকে এ ঘটনায় নিহতের বোন নুসরাত হাজান গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি মামলা করেন। পরে ২ মে এ ঘটনায় মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ নাজমুল হক চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন। শারুন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুনিয়া ও শারুনের কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরে ইতিমধ্যে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। যদিও শারুন এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৮মে/এআইএম/জেবি)