এক-এগারোর কিংস পার্টির কে কোথায়?

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২১, ০৯:৩৬ | আপডেট: ০৯ মে ২০২১, ০৯:৪২

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

স্বপ্ন ছিল সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার। এজন্য রাতারাতি গঠন করা হয়েছিল নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল। এক-এগারোর সময় যাত্রা শুরু করা এমন একাধিক ছোটখাটো দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল আলোচিত ‘কিংস পার্টি’। এই দলের নেপণ্যে থাকা নেতারা রাজনীতিতে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছেন। কেউ ইতিমধ্যে মারা গেছেন, কেউ আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। হদিস নেই খোদ কিংস পার্টিরও!

ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেসব দলের সমন্বয়ে কিংস পার্টি গড়ে ওঠে সেগুলো হলো- ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহম্মদের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কল্যাণ পার্টি। ওই সময় মূলত জাগপার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে কিংস পার্টি পরিচিতি লাভ করে।

এর বাইরেও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘নাগরিক শক্তি’ নামের একটি দল গঠনের তোড়জোড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা গঠন করতে ব্যর্থ হন।

কোন নেতার কী হাল?

‘কিংস পার্টির’ নেতাদের মধ্যে বিএনপির সাবেক নেতা ফেরদৌস আহমদ কোরেশী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল- পিডিপি গঠন করেন ২০০৭ সালের ২১ জুন। গুঞ্জন ছিল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশ পিডিপিতে যোগ দিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত বড় দলের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা যাননি কোরেশীর দলে।

গত বছরের ৩১ আগস্ট নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ফেরদৌস আহমদ কোরেশী।  তার রেখে যাওয়া দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। অবশ্য দলের শীর্ষ নেতারা কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছাড়া আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়নি পিডিপি। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ১০-১২ জেলায় কার্যালয় আছে বলে জানা গেছে।

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর। বিএনপি জোটের সঙ্গে থাকা দলটির মাঠ পর্যায়ে খুব প্রভাব না থাকলেও রাজনীতিতে কিছুটা আলোচনায় আছে।

সম্প্রতি এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নতুন জোট জাতীয় মুক্তমঞ্চে যোগ দিয়ে আলোচনায় আসে কল্যাণ পার্টি। দেশের ৩০ জেলায় তাদের পূর্ণাঙ্গ আর আট জেলায় আহ্বায়ক কমিটি আছে বলে জানা গেছে।

কিংস পার্টির অন্য একজন নেতা কাজী ফারুক আহম্মদ। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী ফারুক নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন’।

২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছিল কাজী ফারুকের দল। পরের বছর ২৪ মে তাকে প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করার পর থেকে দলটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে।

পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নিবন্ধন আইনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় প্রশিকার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ফারুকের এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে প্রয়াত রাজনীতিক শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৭ সালের ১৯ জুলাই। তখন দলটির মহাসচিব ছিলেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোটের সঙ্গে থাকলেও নিলুর এনপিপি একসময় জোট ছেড়ে দেয়।

নিলু ২০১৩ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেন। ২০১৫ সালে তিনি জোট ছেড়ে দিলে ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ জোটে থেকে যায়।

শেখ শওকত হোসেন নীলুর মৃত্যুর পর এখন তার ছোট ভাই শেখ ছালাউদ্দিন ছালু মূল অংশের (নিবন্ধিত) চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই মণ্ডল।

জানা গেছে, কিংস পার্টির দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোও নেই। যদিও ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের সরকারের সমর্থনপুষ্ট হওয়ার কারণে এসব দলের তৎপরতা ছিল।

অবশ্য নিজেদের কিংস পার্টির অংশীদার মানতে নারাজ এসব দলের কোনো কোনো নেতা। ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এনপিপি গঠনের পরই আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনসহ রাজনীতিবিদদের মুক্তির দাবি করেছি। সভা-সেমিনার করেছি নির্বাচনের দাবিতে। আমরা কিংস পার্টি হলে নিশ্চয়ই এসব করতাম না। এখনো আমরা অতীতের মতো গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/বিইউ/জেবি)