বিএনপি নেতা কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় কোন ভিসায় এত বছর?

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২১, ১৬:৪১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম। কমিশনার থেকে বর্তমানে ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি। একসময়ে বেশ প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে। মাঝে হয়েছেন আলোচিত তাবেল্লা সিজার হত্যাসহ অসংখ্য মামলার আসামি। অবশ্য বিদেশে বসেই তিনি দল পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে কলকাঠি নাড়েন নির্বিঘ্নে। বিএনপির এই নেতা মালয়েশিয়ায় আছেন পরিবারসহ।

প্রশ্ন উঠেছে- কোন ভিসায় বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে থাকছেন এম এ কাইয়ুম? নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাইয়ুম কি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছেন- এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত এই বিএনপি নেতার সঙ্গে। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।

নেতাকর্মীরা বলছেন, একের পর এক মামলার বেড়াজালে পড়ার কারণে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে এম এ কাইয়ুমকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় গাড়ি পোড়ানোসহ নানা অভিযোগে মামলা আছে অর্ধশতাধিক। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মামলা গুলশানে ইতালি নাগরিক তাবেল্লা সিজার হত্যা মামলায় আসামি হওয়া। ২০১৫ সালের তাবেল্লা হত্যা মামলার  কার্যক্রম প্রায় শেষপর্যায়ে।

আলোচিত তাবেল্লা সিজার হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এর ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।  

কে এই কাইয়ুম?

ঢাকার প্রয়াত মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় কাইয়ুম গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন। দলের প্রয়াত মেয়র আব্দুস সালাম তালুকদারের হাত ধরে তিনি বিএনপিতে এসেছিলেন বলেও শোনা যায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম।

জানা গেছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়েছিলেন কাইয়ুম। আবাসন ব্যবসা ছাড়াও মালয়েশিয়ায় তার অঢেল অর্থকড়ি আছে। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঠিক আগেই কাইয়ুম পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে অবস্থান করেই দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তিনি।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের নির্বাহী আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়। দু’ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব-উন নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।

অন্যদিকে ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তরে বিএনপির সভাপতি হন এমএ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। কমিটি হওয়ার আগে থেকে অদ্যবদি বিদেশেই আছেন তিনি।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর মেয়াদ দুই বছর। সে হিসাবে গত বছরের ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বারবার আলোচনায় ওঠে যে কোনো সময় ভেঙে দেয়া হবে মহানগর কমিটি। কিন্তু এখন পর‌্যন্ত কমিটি বহাল আছে। উল্টো উত্তরের সাধারণ সম্পাদক করোনায় মারা যাওয়ার পর গত জুনে নিজের ঘনিষ্ঠ আব্দুল আলীম নকীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে বসান কাইয়ুম।

অভিযোগ আছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর গুলশান, বাড্ডা এলাকায় জমি দখলসহ নানা অভিযোগ ওঠে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০০৪ সালে কমিশনার হওয়ার পর বাড়তে থাকে প্রভাব প্রতিপত্তি। পরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়ে তোলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রোপার্টিজ।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কাউয়ুমের আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় তার স্ত্রী শামীম আরাকে। শুরুতে কয়েকদিন মাঠ গরম করলেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ‘নাভিদ উল ওয়ারস’ নামে একটি গার্মেটের চেয়ারম্যান কাইয়ুমপত্নী সবশেষ কয়েকমাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসেছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠসূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বিএনপির একজন মহানগর উত্তরের নেতা বলেন, ‘একজন আত্মীয় মারা যাওয়ার খবরে ভাবি (শামীম আরা) দেশে এসেছিলেন। তাও গতবছরের শেষের দিকে। আবার মালয়েশিয়া চলে গেছেন। তার সন্তানরাও বাইরে।’

এতদিন ধরে কিভাবে, কোন ভিসায় এম এ কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন ভিসায় আছেন তা তো বলা মুশকিল। তবে যতদূর জানি ওখানে তার সব কিছু। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক কিছুই আছে। দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর ওখানে বসেই রাখেন।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উপলক্ষে বিদেশে বসে এম এ কাউয়ুমকে ভার্চুয়ালি কথা বলতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিএনপি দলীয়ভাবে পালন করেন এমন দিবসগুলোতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নানা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখতেও দেখা গেছে তাকে।

 

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/বিইউ/ইএস)