বিধ্বস্ত ভারতে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে কেরালা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১০ মে ২০২১, ১১:০৬

করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত গোটা ভারত। অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং হাসপাতালে বেডের প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে একেবারে ব্যতিক্রম দেশটির কেরালা রাজ্য। গোটা ভারত যেখানে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করছে সেখানে এ নিয়ে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে এই রাজ্য।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশ জুড়ে হাহাকারের মধ্যেও কী ভাবে একটু হলেও ব্যতিক্রমের ছবি দেখাতে পারছে কেরল? এক কথায় তার উত্তর হল- প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাঝের সময়ে সে রাজ্যের সরকার এমন কিছু পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা নিয়েছে, স্বল্প হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায়।

যার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এক বছরের মধ্যে রাজ্যে তরল অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়ানো। নিজের রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা সামাল দিয়ে তামিলনাড়ু, কর্নাটককে অক্সিজেন দিতে পারছে পিনারাই বিজয়নের রাজ্য।

রাজ্য সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি দু’রকম পরিকল্পনা প্রয়োগ করে কোভিড মোকাবিলায় এগিয়েছে রাজ্য। এখন যেমন সর্বশেষ রূপরেখা অনুযায়ী, সব সরকারি হাসপাতালে কোভিড ক্লিনিক রাখা হয়েছে, খোলা হয়েছে কোভিড ওপিডি। পরীক্ষা, প্রাথমিক ওষুধ সব সেখান থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

কেরালায় ২০১৮ সালে নিপা ভাইরাস হানা দেওয়ার পরে ফিভার ক্লিনিক চালু হয়েছিল, সেগুলোই মূলত বদলে নেওয়া হয়েছে কোভিড ক্লিনিকে। জেলায় জেলায় তালুক (ব্লক) হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সুবিধাসহ বেড রাখতে বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি বেড থাকবে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনসহ।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকছে কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেরয়েড ও অন্যান্য ওষুধের ব্যবস্থা। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার বক্তব্য, ‘সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আপাতত জোর দেওয়া হচ্ছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের দিকেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আমাদের অনুরোধ, তারা যেন ৫০% পরিকাঠামো কোভিডের জন্য ছেড়ে রাখে।’

আপৎকালীন পদক্ষেপের আগে আছে আরও কিছু পরিকল্পনা। তার মধ্যেই প্রধান হল অক্সিজেন উৎপাদন। গত বছর লকডাউনের সময়ে পেট্রলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অরগানাইজেশন (পেসো) এর তরফে বৈঠক ডেকে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনের হিসেব চাওয়া হয়। সব হাসপাতালকে বলা হয়, অক্সিজেনে ‘লিকেজ’ এর দিকে নজর রাখতে।

বেসরকারি উৎপাদকদের বলা হয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের পাশাপাশি মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ীই, কেরালা মিনারেলস অ্যান্ড মেটালস লিমিটেড (কেএমএমএল) গত অক্টোবর থেকে নতুন প্ল্যান্ট চালু করে দৈনিক ৭ টন করে তরল অক্সিজেন দিচ্ছে। অন্য সব সরকারি ও বেসরকারি উৎপাদক ধরে কেরালায় রোজ এখন তৈরি হচ্ছে গড়ে ২০৪ টন অক্সিজেন। আর রাজ্যে চাহিদা গড়ে ৭৯ টন অক্সিজেনের।

পেসোর কর্মকর্তা আর বেণুগোপাল জানাচ্ছেন, করোনার সংক্রমণ আরও বাড়লে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে। নতুন প্ল্যান্টগুলি পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন এখনও শুরু করেনি, সেক্ষেত্রে তাদের গতি বাড়াতে বলা হচ্ছে। আবার কোট্টায়ম, ত্রিশূর ও এর্নাকুলাম মেডিক্যাল কলেজে যে নতুন ‘প্রেসার স্যুইং অ্যাবসর্বশন সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে, তার দৌলতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে সুবিধা হবে।

ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে কেরালা বাড়তি সুবিধা, সচেতনতা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় এগিয়ে। তারই সুবাদে কেরালা যত করোনা টিকার ডোজ পাচ্ছে, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা ভায়াল থেকে সামান্য ফোঁটাও শুষে নিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে ইনজেকশন দিচ্ছেন। মহামারি আতঙ্ক মোকাবিলায় শুরু হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও।

রাজ্যের এই অবস্থা তৈরি করেছে সরকার। তার প্রতিফলনও পেয়েছে তারা। সাড়ে চার দশকের রেওয়াজ ভেঙে বাম সরকার পরপর দু’বার ক্ষমতায় ফিরেছে রাজ্যে।

ভারতে করোনাভাইরাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত একদিনে দেশটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের মৃত্যু ও সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১০মে/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :