খালেদার চিকিৎসা নিয়ে কী ভাবছে দল ও পরিবার?

প্রকাশ | ১০ মে ২০২১, ২২:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রস্তুতি ছিল পরিবার ও দলের। তবে সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় আপাতত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নেয়া যাচ্ছে না। এজন্য সিসিইউতে থাকা বিএনপি-প্রধান দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসাটুকু যেন পান সে চেষ্টা চলছে। এছাড়া তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারেও হাল ছাড়ছে না দল ও পরিবার।

সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, এখন ঢাকায় সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা তারা করবেন। একইসঙ্গে বিদেশে নেয়ার জন্য আইনগত বা অন্য কোনো উপায় আছে কি না-তা খতিয়ে দেখে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফখরুল বলেন, ‘আমরাতো জোর করে তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারবো না। এখানে সরকার না করে দিয়েছে। সুতরাং আমরা চেষ্টা করবো, এখানেই তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার জন্য। একই সময় অন্য কোনো অপশন আছে কি না-আইনগত বা অন্য কোনো উপায়, সেটাও আমরা দেখবো।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্যান্য অপশনগুলো আমরা ভেবে দেখবো এবং সেগুলো আমরা আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

এদিকে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি মানবিক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতে পারে-সরকারের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দর আবেদনটি করেছিলেন।

আইনজীবীদের অনেকে বলেছেন, অনুমতির জন্য বিএনপি আদালতে যেতে পারে এবং সাজার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।

তবে বিএনপির একজন আইনজীবী নেতা বলেছেন, দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের সাজা সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতায় স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল, ফলে আইনগত অন্য প্রক্রিয়ায় কতটা লাভ হবে-তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে কারোর দণ্ড স্থগিত, পুরো বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে মুক্তি দিতে পারে৷ শর্তসাপেক্ষে দিতে পারে আবার শর্তহীনভাবেও দিতে পারে৷ ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যেহেতু দণ্ডিত তাই সরকার এই আইনেই তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে৷ তাকে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্ত তুলে শর্তহীন করার ক্ষমতা এই আইনেই সরকারকে দেয়া হয়েছে।’

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, যারা এখন খালেদা জিয়ার বিষয় নিয়ে আদালতে যেতে বলছেন তারা আসলে ঠিক বলছেন না৷ কারণ এটা তো আদালতের সিদ্ধান্ত নয়৷ খালেদা জিয়াকে তো নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ আর সেই আইনে শর্ত দেয়া বা না দেয়া সরকারের ইচ্ছা৷ এখন শর্ত তুলে নিলেই তো খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে পারেন৷

তিনি মনে করেন, ‘এটা রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে৷ আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি ৪০১ জানেন না! এখানে কোনো সিগন্যাল ছিল তাই তারা প্রথমে সহানুভূতির সাথে বিবেচনার কথা বলেছেন তারা৷ পরে হয়তো কোনো কারণে তারা উল্টে গেছেন৷ আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কি স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন?’

এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা এখনো স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।করোনা আক্রান্ত হওয়ার ২৭ দিন পর শনিবার রাতে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

খালেদা জিয়া গত ১১ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এই দিন রাতেই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় তার বাসার আরও আটজন কর্মীও করোনায় আক্রান্ত হন। এর ১৪ পর পর গত ২৫ এপ্রিল আবারও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তখনও তিনি করোনা পজিটিভই ছিলেন।

গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন নাকচ করা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তির সময় আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার। এ বছরের মার্চে তৃতীয়বারের মতো ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/১০মে/জেবি)