শেখ মুজিবও প্রতিপক্ষকে চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছেন: ফখরুল

প্রকাশ | ১১ মে ২০২১, ১৬:০৪ | আপডেট: ১১ মে ২০২১, ১৭:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দলীয় চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ না দেয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানও এমন ছিলেন না। তিনিও তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করেছেন। কিন্তু আপনাদের (বর্তমান সরকারের) যোগ্যতা নেই। থাকলে অনেক আগেই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কেন আপনারা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে আমরা দেব না। সেই ক্ষমতা তো আপনাদের নেই।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে অনুমতি না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বলছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির এমন নজির নেই। কিন্তু ১৯৭৯ সালে আমাদের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আ সম আব্দুর রব জেলে ছিলেন। তখন জিয়াউর রহমান দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে দেশে এসেছিলেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ২০০৮ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাজা মাফ করে দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এমন আরও অনেক আছে, আমি নাম বলবো না। অত্যন্ত উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী সরকারের কর্মকর্তাই বলব, তার দুই সহোদর ভাই আইনের এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদেরকে মাফ করে দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। কেনো খালেদা জিয়ার বিষয়ে খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন। সোজা বলে দেন যে আমরা তাকে (বিদেশে যেতে) অনুমতি দেবো না।

‘খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংযত হয়ে কথা বলুন’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের অত্যন্ত দায়িত্বশীল মন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন সম্পর্কে গতকাল কিছু রুচিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার নাম উল্লেখ করতে চাই না। কারণ, এটা আমার শিক্ষাদীক্ষার সঙ্গে যায় না। আরেকজন মন্ত্রী, যিনি ডক্টরেট-টক্টরেট করে এসেছেন, কিভাবে কী করেছেন, সেটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। তিনিও আমাদের নেত্রী সম্পর্কে খুবই অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন। আমি তাদের সেই কথার কোনো জবাব দিতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, খালেদা জিয়া সম্পর্কে সংযত হয়ে কথা বলুন।’

বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই বলে যে মতামত দেয়া হয়েছে এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি Per Incuriam বা ভ্রান্ত মতামত। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় সরকারকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে শর্তহীন কিংবা শর্তযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার। আদালত যদি বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞাও দেয়, তারপরও সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি ‘৪০১ (১) এবং ৪০১(৪ ক) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৪০১ (৪ক) ধারা পড়লে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, কোনো আইনে যদি কোনো আদালত সাজাপ্রাপ্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আদেশ দেন সেক্ষেত্রেও সরকার তা স্থগিত করে তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। এটি সরকারের সহজাত ক্ষমতা কিংবা Inherent Power। দুদক আইন, ২০০৪ এ সরকারের এই ব্যাপক সহজাত ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়নি। ফলে, দুদকেরও এখানে বলার কিছু নাই।’

খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘যাচ্ছে তাই কথা’ বলে সরকার পার পেয়ে যাবে চিন্তা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো শুধু অশালীন নয়, অমার্জিত এবং অগ্রহণযোগ্য। আমি আবারও বলছি, দয়া করে সংযত হোন, দয়া করে আপনাদের কথা একটু কমান। তার পায়ের নখের সমানও হতে পারেন নি। যাচ্ছে তাই বলবেন, আর মনে করবেন সবসময় পার পেয়ে যাবেন। এভরিথিং ইজ বিং নোটেড অ্যান্ড দি পিপলস অব দিস কান্ট্রি উড বি গিভ এনারসার টু টাইমলি।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নাকচ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনারা বলেছেন, অনুমতি দিতে পারছেন না। কেন পারছেন না, যে যুক্তিগুলো দিলেন, সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করি নাই। আবেদন করেছে পরিবার। ইটস ভেরি লাইটলি অ্যান্ড জেনুইন। তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, যারা আবেদন করেছেন। সেখানে সবাই এসপেক্ট করেছিল, এমনকি বিদেশিরা পর্যন্ত এসপেক্ট করেছিল তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। সেটা তারা দেয়নি।’

প্রণোদনা কোথায় দিচ্ছেন?’- প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এমন প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘বার বার করে বলেছেন যে, প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কোথায় প্রণোদনা দিচ্ছেন? এই যে লাখ ছয় কোটি মানুষ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করছে, তাদের ৮০% বেকার। তাদের কোনো আয় নাই।'

(ঢাকাটাইমস/১১মে/বিইউ/এমআর/জেবি)