কেন পদত্যাগ করেছিলেন বাবুল আক্তার?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ মে ২০২১, ২২:৪৮ | প্রকাশিত : ১১ মে ২০২১, ২২:৩২

প্রায় পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডটি নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে। মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মিতুর স্বামী, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের যোগসূত্রতা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। স্ত্রী খুন হওয়ার পর এসপি বাবুল আক্তার কেন পদত্যাগ করেছিলেন সে প্রশ্নটি এখন নতুন করে সামনে এসেছে।

নিজের পদত্যাগ নিয়ে বাবুল আক্তার কখনোই গণমাধ্যমে কিছু বলেননি। তবে তার শ্বশুর, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে তখন বলেছিলেন, ‘বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। তাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়।’ তখন তিনি দাবি করেছিলেন, বাবুল চাইলেও তাকে কাজে যোগ দিতে দেয়া হয়নি।

মোশাররফ হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, ‘পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা কীভাবে, কোথায় বসে, কার মাধ্যমে পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন, সেটা একটা বড় ব্যাপার।’ তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে নেয়া হয় ২০১৬ সালে ২৪ জুন রাতে। ওই দিন তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয়। সেটা ছিল শুক্রবার। মোশাররফ হোসেনের প্রশ্ন, ‘ছুটির দিনে একজন কর্মকর্তা কী করে পদত্যাগ করবেন?’

বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর এ ব্যাপারে কথা বলতে তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের ফোনে বারবার যোগাযোগে চেষ্টা করা হয়। তবে তা বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাবুল আক্তারের পদত্যাগের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, তার পদত্যাগপত্র এসেছে। এর আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুসারে যা যা করার দরকার, করা হচ্ছে।

তখন বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) বিভাগীয় উপকমিশনার মাহবুবুল আলম। তিনি এখন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার। এ ব্যাপারে মাহবুবুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।

পুলিশ সদরদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৬ সালের ৫ জুন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের পর ৩ আগস্ট বাবুল আক্তার তার কর্মস্থল পুলিশ সদরদপ্তরে গিয়ে লিখিতভাবে কাজে যোগ দিতে চান। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে জানিয়ে দেন, তাকে আর কাজে যোগদান করতে দেয়া সম্ভব নয়। পরদিন ৪ আগস্ট বাবুল লিখিতভাবে যোগদানপত্র জমা দেন। এতে তিনি বলেন, স্ত্রী খুন হওয়ার পর দুই সন্তানের দেখাশোনার জন্য কর্মকর্তাদের পরামর্শমতো তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে দুই সন্তানকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছেও নেয়া হচ্ছে। অনুপস্থিতির সময়টা ছুটি হিসেবে নিয়ে তাকে যোগ দেয়ার সুযোগ চান বাবুল। পুলিশ সদরদপ্তরে এই আবেদনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কোনো মতামত দেননি বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে বদলি হয়ে আসার দুই দিন পর ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন বাবুল আক্তার।

শুরুতে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশের ধারণা পাল্টে যায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ওই বছরের ২৪ জুন গভীর রাতে খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আবার তাকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।

জানা যায়, ওই জিজ্ঞাসাবাদের সময় পদত্যাগপত্রে সই করেন বাবুল। বেশ কিছুদিন সেই পদত্যাগপত্র পুলিশ সদরদপ্তরে থাকার পর কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তখনকার কথা আমার মনে নেই। আগামীকাল হয়ত পিবিআই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের বিস্তারিত বলবে। এ বিষয়ে আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না।’

(ঢাকাটাইমস/১১মে/এএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :