আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ছিল ডলি জহুরের, এখন কোথায় তিনি? কী করছেন?

প্রকাশ | ১২ মে ২০২১, ১০:৩৪

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের অভিনয় জগতের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডলি জহুর। মঞ্চ থেকে শুরু করে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব জায়গায় সমান অভিনয় করেন। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের সিনেমায় নায়ক-নায়িকাদের মায়ের চরিত্রে তিনি ছিলেন অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কাজ করেছেন দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে। দুই বার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে, অন্য বার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে।

এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে এখন ছোট-বড় কোনো পর্দায়ই তেমন দেখা যায় না। ২০১৫ সালে ‘শেষের রাত্রি’ ছবিতে তাকে শেষ দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে।

কোথায় আছেন, কেমন আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর? করোনা মহামারির মধ্যে তার দিনকালই বা কীভাবে কাটছে? এসব বিষয়ে জানতে ডলি জহুরের ব্যক্তিগত সেলফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পরে অভিনেত্রীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ‘ডলি জহুর কয়েক বছর ধরে তার একমাত্র সন্তান রিয়াসাত আজিমের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকছেন। তাই আপাতত তাকে ফোনে পাওয়া যাবে না। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো মাধ্যমও ব্যবহার করেন না।’

সূত্রটি আরও জানায়, ডলি জহুরের ছেলে রিয়াসাত সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া থাকেন। সেখানে শিক্ষকতা করে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে রিয়াসাত প্রথম বাবা হন। কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টা পরেই সেই সন্তান মারা যায়। এতে রিয়াসাত মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। এর কিছুদিন পরই তিনি অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে খুব বেশি আঘাত না পেলেও মোটা অংকের অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। পরপর দুটি দুর্ঘটনায় বিষণ্নতার মধ্যে পড়ে যান রিয়াসাত। দুটি ঘটনার সময়ই অস্ট্রেলিয়াতে ছিলেন ডলি জহুর। ছেলের পাশে থেকেছেন। এখনো থাকছেন।’

এছাড়াও ডলি জহুরের অভিনয়ে অনিয়মিত হওয়ার আরও একটি কারণ উঠে এসেছে। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন জ্যেষ্ঠ্ সদস্য। গুঞ্জন রয়েছে, এই সমিতিকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রে গত কয়েক বছর ধরে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেটা একেবারেই পছন্দ নয় ডলি জহুরের। তাছাড়া বর্তমানে বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই নির্মিত হয় নিম্নমানের গল্পে। অন্যদিকে, ছোট পর্দার নাটকগুলোও এখন হয়ে গেছে নায়ক-নায়িকা নির্ভর। সেখানে মা কিংবা বাবাদের চরিত্র তেমন থাকে না, থাকলেও প্রাধান্য পায় না। এসব কারণেও অভিনয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী।

১৯৫৩ সালে ঢাকার গ্রিন রোডে জন্ম হয় ডলি জহুরের। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৭৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মঞ্চ নাটক দিয়ে তার অভিনয় যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে সময় তিনি যুক্ত হন কথক নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে। এরপর ১৯৮৩ সালের দিকে শুরু করেন চলচ্চিত্রে অভিনয়। ওই সময়কার নায়কদের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে থাকেন। অল্প সময়েই তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করে ফেলেন।

পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে ওই সময়কার জনপ্রিয় সব নায়ক-নায়িকাদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ডলি জহুর। বড় পর্দায় অভিনয় করেই তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি, পরিচিতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯২ সালে মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবিটিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম জাতীয় পুরস্কারটি লাভ করেন। এরপর ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদের ‘ঘানি’তে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জেতেন দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কারটি।

ডলি জহুরের নাটকে অভিনয় হয়েছিল প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। ১৯৮৫ সালে বিখ্যাত এই লেখক ও সাহিত্যিকের এইসব দিনরাত্রি নাটকটিতে তিনি অভিনয় করেন। সেখানে নিলু ভাবী চরিত্রে তিনি দারুণ পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি হুমায়ূন আহমেদের একক নাটক ‘জননী’তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেটিও ব্যাপক সাড়া ফেলেন ডলি জহুর। এভাবে প্রায় অর্ধশত নাটকে অভিনয করে ছোট পর্দায়ও নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ্য হন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর অভিনেতা জহুরুল ইসলামকে বিয়ে করেন ডলি জহুর। ১৯৭৫ সালের দিকে কথক নাট্যগোষ্ঠীতে একসঙ্গে কাজের সুবাদে তাদের পরিচয় হয়েছিল। সেই পরিচয় পরিণয়ে রূপ নেয় খুব শিগগিরই। বিয়ের ৯ বছর পর জন্ম হয় এই দম্পতির একমাত্র সন্তান রিয়াসাতের। কিন্তু ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর মারা যান ডলি জহুরের স্বামী জহুরুল ইসলাম। সেই থেকে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন অভিনেত্রী। সেই নিঃসঙ্গতা বোধহয় সেই বয়সে তাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বানিয়ে দিল।

ঢাকাটাইমস/১২মে/এএইচ/এমআর