মাহী বি চৌধুরী কি দৃশ্যের আড়ালে চলে গেলেন, কী হলো তার?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ মে ২০২১, ০৯:২৮

তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে বেশ নামডাক থাকলেও খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেননি বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী। নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সময় তরুণদের নিয়ে প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করলেও তাতে গতি আনতে পারেননি। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে লড়তে গিয়েও ছেড়ে আসা রাজনৈতিক দল বিএনপির সমর্থন পাননি। অবশ্য সবশেষ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসেবে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সংসদ আর নিজ এলাকায় আসা-যাওয়া থাকলেও বছরখানেক ধরে অনেকটা চোখের আড়ালে মাহী। জানা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাহী পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে করোনাকালে নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে থাকার সুযোগ হয়নি তার।

এমন অবস্থায় তরুণ রাজনীতিক হিসেবে আলোচনায় আসা মাহী বি চৌধুরী সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেলেন কি না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

যদিও দলীয় সূত্র বলছে, বিদেশে থাকলেও দলের বিভিন্ন বৈঠক বা আলোচনায় ভার্চুয়ালি সবসময়ই যুক্ত থাকেন মাহী বি চৌধুরী।

বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাহী বি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। মাঝে মার্চে একবার দেশে এসেছিলেন। পরে আবার চলে গেছেন। তবে ভার্চুয়ালি তিনি সবকিছুতে যুক্ত থাকেন সবসময়।’

একসময় বেশ সক্রিয় থাকলেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব একটা সরব নন মাহী বি চৌধুরী। তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেখা গেছে, সবশেষ তার নির্বাচনী এলাকা সিরাজদিখানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। একই সময়ে কোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খানের মরদেহ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে জানাজা ও দাফন করতে দেখা গেছে এই সংসদ সদস্যকে।

জানা গেছে, মাহী বি চৌধুরী প্রায় এক বছর ধরে সপরিবারে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। মাঝে দেশে এসে ছিলেন মাত্র ১৫ দিন। এ সময় তাকে প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সবশেষ গত এপ্রিলের শেষের দিকে আমেরিকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করতে দেখা গেছে মাহী বি চৌধুরীকে।

রাজনীতিতে মাহী বি চৌধুরী

সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব।

মাহী বি চৌধুরী ১৯৯২ সালের আগস্টে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে ২০০২ সালে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হওয়ায় মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২১ জুন বি চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৪ সালের ১০ মার্চ বাবা-ছেলে দুজনই বিএনপি ছাড়েন।

পরবর্তী সময়ে বি চৌধুরীর প্রতিষ্ঠা করা বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন ছেলে মাহী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করে বিএনপির শাহ মোয়াজ্জেমকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বি চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপি, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও গণফোরামকে নিয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। পরবর্তী সময়ে মাহী তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘প্ল্যান বি’ উপস্থাপন করেন। যুক্তফ্রন্টের মধ্যে এসময় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, মাহী জামায়াতের সঙ্গে একত্রে নির্বাচনে যেতে নারাজ হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যায় বিকল্পধারাকে ঐক্য থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে বিকল্পধারা তিনটি আসনে মনোনয়ন পায়। এরমধ্যে মুন্সীগঞ্জে মাহী ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে তার শ্বশুর আবদুল মান্নান বিজয়ী হলেও মৌলভীবাজার-২ আসনে তাদের প্রার্থী হেরে যান।

দুদকের জালে মাহী-দম্পতি

২০১৯ সালের জুনে মাহী বি চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন আহম্মদ প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এই দম্পতিকে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গত বছরের ১২ অক্টোবর নোটিশ পাঠান।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট মাহী বি চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা জালাল।

অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাহী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুযোগ নেই, মানি লন্ডারিংয়েরও সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বাইরে যদি কোনো আয় থেকে থাকে, তা বাংলাদেশের বাইরের বৈধ আয় থেকেই হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৩মে/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :