ভ্যাক্সিন দেয়ার ব্যপারে কোনো রকম দ্বিধা করবেন না

ডা. নুসরাত সুলতানা
 | প্রকাশিত : ১৩ মে ২০২১, ১৫:৩০

কোভিড- ১৯ এর ভ্যাক্সিন নিয়ে কৌতুহল ও জিজ্ঞাসার শেষ নেই। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন কাজ করবে কিনা, মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে কিনা, এইসব নানান দ্বিধার কারণে অনেকে ভ্যাক্সিন নেননি। এ তালিকায় আছে অনেক চিকিৎসকও।

যারা ভ্যাক্সিন নিতে দ্বিধায় আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ভ্যাক্সিন দেয়ার ফলে শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা পলিক্লোনাল এন্টিবডি। ফলে এটি রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ না করতে পারলেও মারাত্মক কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করবে।

পলিক্লোনাল এন্টিবডি আসলে কি? পলি- বহু, ক্লোনঃ একই রকম দেখতে। ধরুন, একটি পাত্রে লাল, হলুদ, সবুজ এই তিন ধরনের ক্যাপসিকাম আছে। এখন তারা পলিক্লোনাল। কারণ বহু রঙ এর ক্যাপসিকাম একটি পাত্রে আছে। আপনি রঙ হিসেবে বাছাই করে আলাদা পাত্রে রাখতেই মনোক্লোনাল (মনো-১) হয়ে গেল অর্থাৎ একটি পাত্রে সবুজ, একটি পাত্রে লাল আর অন্যটিতে হলুদ।

যখন এরা একই পাত্রে ছিল তখন যেকোনো একটি রং এর সব ক্যাপ্সিকামে পচন ধরলেও কাজ চালিয়ে নেয়া যেত। এতে খাবারটা দেখতে সুদৃশ্য না হলেও স্বাদে কোনো পরিবর্তন হতো না। কিন্তু আলাদা ভাবে সেই নষ্ট পাত্রটাই যদি কারো ভাগ্যে পড়ত, তার পুরো রান্নাটাই মাটি হতো।

এই খোঁড়া উদাহরণটি কেবলমাত্র পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছি। এবার আসি ভ্যাক্সিনের কথায়। ভ্যাক্সিনের মূল উপাদান হচ্ছে এন্টিজেন। যার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধকারী এন্টিবডি তৈরি হয় যা পরবর্তীতে আমাদের সুরক্ষা দেয়। ভ্যাক্সিনের এন্টিজেন হিসেবে জীবানুর সেই অংশকে বাছাই করা হয় যা দিয়ে জীবানুটি আমাদের কোষকে আক্রমন করে। যেমন করোনার স্পাইক প্রোটিন এন্টিজেনকে ব্যবহার করা হয়েছে ভ্যাক্সিনে।

প্রতিটি এন্টিজেনের অসংখ্য এপিটোপ থাকে। প্রতিটি এপিটোপের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা এন্টিবডি তৈরি হয়। নির্দিষ্ট এপিটোপের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া নির্দিষ্ট এন্টিবডিই হচ্ছে মনোক্লোনাল এন্টিবডি। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় যে, এন্টিবডিগুলো পলিক্লোনাল হিসেবে থাকে। তাই নতুন নতুন যত ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, ভ্যাক্সিন নিদেনপক্ষে মারাত্মন কোভিড থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারবে। ভ্যাক্সিনের মূল লক্ষ্য তাই।

ভ্যাক্সিন দেয়ার ব্যপারে কোনো রকম দ্বিধা করবেন না। রাশিয়ান , চাইনিজ না ইন্ডিয়ান এটা নিয়েও মাথা ঘামাবেন না। যেটা আগে পাবেন সেটাই নিবেন।

একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। এক শিক্ষক তার প্রিয় ছাত্রকে একটি বিশাল বড় কুমড়া ক্ষেত দেখিয়ে সবচেয়ে সুদৃশ্য একটি কুমড়া নিয়ে আসতে বললেন। ছাত্র ক্ষেতের ভেতর হাঁটছে, চোখেও পড়ছে সুদৃশ্য কুমড়া। কিন্তু আবার ভাবছে হয়তো সামনে আরো সুদৃশ্য কিছু পেয়ে যেতে পারে। এভাবে সামনে এগোতে এগোতে দেখলো পেছনে আরো ভালো কুমড়া ফেলে এসেছে। কিন্তু শর্তানুযায়ী সে তো আর পেছনে ফিরতে পারবে না। এভাবে পুরো ক্ষেত পার হয়ে গেল। কুমড়া আর পাওয়া গেল না।

বেশি ভাবনা চিন্তা করলে সময় তো পার হবেই, মারাত্মক করোনায় আক্রান্ত হওার রিস্ক ও বেড়ে যাবে। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আসাও কিন্তু থেমে যাবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক: ডা. নুসরাত সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজী বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ঢাকাটাইমস/১৩মে/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

কেন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :