ঈদের নামাজেই আগরতলা মামলার সংবাদ

আব্দুল্লাহ আল হাদী
 | প্রকাশিত : ১৩ মে ২০২১, ২০:২৪

ঈদের নামাজেই প্রথম আগরতলা মামলার নিশ্চিত সংবাদ পান বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর যৌবনের অধিকাংশ ঈদগুলো জেলেই কেটেছিল। একটা অদম্য যৌবনের বিনিময়ে একটি ভূখণ্ড, একটি জাতির লালিত স্বপ্ন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তিনি কখনোই যেখানে পিছপা হননি অন্তত নিজের সামনা-সামনি।

আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আসামি করা হয়েছে, তা তিনি কানাঘুষা অনুমান করলেও জেলখানায় ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েই প্রথম জানতে পেরেছিলেন এর সত্যতা। জেলখানায় শুধু ঈদের দিন কেবল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য সবাইকে একত্রিত হতে দেয়া হতো, সে সময় ফজলুর রহমান সিএসপি, কয়েকজন সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সাক্ষী কামালউদ্দিনই বঙ্গবন্ধুকে তাদের ওপর টর্চার সেলে নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়েছিলেন, আর জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

মোটাদাগে বলতে গেলে (১৯৪৮-১৯৫২) ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ এর আইয়ুব খানের সরকার, ৬২ এর আইয়ুববিরোধী শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৬৫ এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, এই সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু মুজিব সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে জায়গা করে নিয়েছেন। সাধারণ সকলেই তাকে তাদের আস্থার জায়গায় স্থান দিতে শুরু করেছেন।

সে সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক বলতে গেলে এক্সপেরিমেন্টাল রাজনীতি করতেন অর্থাৎ কয়েক দিন আওয়ামী লীগ করলেন তো তার কয়েকদিন পর ন্যাপ, আজকে যিনি ন্যাপ হয়ত কয়েকদিন আগে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ, নতুবা মুসলিম লীগ, নতুবা নেজামে ইসলাম, নতুবা কেএসপি, নতুবা এনডিএফ, এরকম আর কী।

ক্ষমতার বাঁটাবাঁটিতে তখন এক একজন ব্যক্তির শুধু দল নয়, নিজেদের মধ্যে নিজেদের পক্ষ পরিবর্তনের প্রতিযোগিতা চলত হরহামেশাই, আজকে যিনি মাওলানা সাহেবের কালকে তিনি আবুল মনসুর আহমেদ সাহেবের নতুবা ওয়ালীপন্থি গ্রুপের, একটু পরেই যিনি আতাউর রহমান খানের, তার একটু আগে তিনি ছিলেন হয়ত ছালাম খান সাহেবের নতুবা অন্যকারো।

আর এসবের অনেক কিছুই তখন সরকারের মদদেই হচ্ছিল। কিন্তু এসবের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সবকিছুর বাইরে গিয়ে কেবল সাধারণ মানুষেরই হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি সাধারণ মানুষকে বুঝতে বা বুঝাতে পেরেছিলেন বাঙালির মুল লক্ষ্য কোথায়।

এবং তিনি যখন ১৯৬৬ সালে 'আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা' দিলেন তখন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে ব্যক্তি মুজিবকে বিশ্বাস করেছিল, কেননা ততদিনে ব্যক্তি মুজিব মানুষের মণিকোঠার ওই খানটাতেই পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল।

এ সময় তার পেছনে জনগণের বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ দেখে বঙ্গবন্ধু মুজিব সিদ্ধান্ত নিলেন –আওয়ামী লীগের কোন কোন জন, বা কোন কোন পার্টির কোন কোন জন তার সাথে আসল কি না আসল, তা নিয়ে তিনি আর ভ্রুক্ষেপ করার সময় পাননি। এমনকি সে সময় তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা জনগণের প্রবাহকেই অনুসরণ করছিলেন।

সে জন্যই শাসক গোষ্ঠী ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে বঙ্গবন্ধু মুজিবকে মানে বাঙালি জনগণকে দমানোর প্রথম বড় ধরনের কোনো দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, কিন্তু পরিণামে জনস্রোতে তা এক দফায় রূপ নিয়েছিল।

লেখক: কবি ও গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :