সেই রিজেন্ট হাসপাতাল এখন...

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২১, ১৩:১৮ | আপডেট: ১৫ মে ২০২১, ১৩:৩৭

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

দেশে মহামারী করোনাভাইরাস শুরু হলে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে কথিত পরীক্ষার কাজ শুরু করেছিল রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল। তবে শয়ে শয়ে ভুয়া পরীক্ষা রিপোর্ট দেওয়ায় র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে সেই হাসপাতালের অপকর্ম।

ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বেরিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের প্রতারণার থলের বিড়াল। একের পর এক প্রকাশ হতে থাকে বহু প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত সাহেদের ইতিহাস।

চিকিৎসার নামে প্রতারণার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া নেওয়া ভবন দখলের চিত্রও উঠে আসে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে না থেকেও দলটির নেতা পরিচয় দিতেন বাকপটু সাহেদ।

বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নিয়ে টকশো করে বেড়াতেন। মূলত এগুলোকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সাহেদ গড়ে তুলেছিলেন তার প্রতারণার সামরাজ্য।  

র‌্যাবের অভিযানের পর জানা যায়, সাহেদের প্রতিষ্ঠিত রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা ও একটি প্রধান কার্যালয় আছে। উত্তরার উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর ও মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হাসপাতালটির দুটি শাখা এবং ১২ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়কে রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় ছিলো। পরে র‌্যাবের অভিযানে সিলগালা করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে রিজেন্ট হাসাপাতালের ভবন দুটি ফেরত পেয়েছেন মালিকরা। সরিয়ে ফেলা হয়েছে ভবনের গায়ে লাগানো রিজেন্টের কলঙ্ক। নতুন করে গুছানো হয়েছে ভবনগুলো।

তবে শাহেদের কাছে ভবনের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল এবং পানির বিল বাবদ লাখ লাখ টাকা এখনো বুঝে পাননি তারা। ভবন বুঝে পেলেও পাচ্ছেন না নতুন ভাড়াটিয়া।

উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাড়িতে থাকা সেই রিজেন্ট হাসপাতালের ভবনের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে ভবনের গাঁয়ে লাগানো সাইনবোর্ড। সংস্কার করা হচ্ছে ভবনের ভেতর বাহির।

ভবনটির দায়িত্বে থাকা ভবনের মালিকের বেয়াই অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাবিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনো ভবন ভাড়া হয়নি। কারণ আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। লকডাউনের কারণে আমরা এখন সংস্কারের কাজ করতে পারিনি। ভবনের বাহিরে দিকটা আর ভেতরে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।’

তিনি জানান, সাহেদ প্রথমে কিছু দিন ভাড়া দিলেও পরে সেটি আর দেয়নি। তিনি ভাড়ার টাকা দিতেন দুই মাস তিন মাস পর পর। শুধু বাড়ি ভাড়া পাবো প্রায় ৪০ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিল ১২ লাখ টাকা। এছাড়া পানি ও গ্যাস বিলসহ অনেক টাকাই তার কাছে পাওনা।

পাওনা টাকা আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নিবেন কি-না জানতে চাইলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা আমরা করতে চাই না। কারণ মামলা করতে গেলেই খরচ। আর আমরা ওর পেছনে ১০ টাকাও খরচ করতে চাই না। কারণ ওর পেছনে ১০ টাকা খরচ করাও বোকামো। পাওনা টাকার আশা করি না। তাকে (সাহেদ) মাফ করে দিয়েছি। মাফ করা ইসলামের শিক্ষা।’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাবিব বলেন, “আমি ওকে ভালোভাবেই চিনেছি। আমার তখনই মনে হয়েছে ওর চলাফেরা খুব খারাপ। আমি তখন ওকে একটি ইসলামি বই দিয়েছিলাম। কদিন পরে এসে সাহেদ আমাকে বলে- ‘স্যার, এই বই পড়লে তো আমি যে কাজ করি সেটা করতে পারবো না।”

ভবন ভাড়া নিয়ে একই কায়দায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে মিতি প্লাজার মালিক ফিরোজ আলমের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে সাহেদ। ভাড়ার টাকা পরিশোদের পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ভবনটি দখলের চেষ্টা চালায় সাহেদ।

ঢাকা টাইমসকে ফিরোজ আলম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ভবন ফেরত পেয়েছি। তবে এখনো ভাড়া দেইনি। করোনার কারণে ভাড়াটিয়াও পাচ্ছি না। ভাড়ার টাকা আদায়ে সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন চার্জশীট দাখিলের অপেক্ষায় আছে। সব মিলেয়ে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পাই।’

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/এএআর/ডিএম)