কারাগারের বিশেষ খাবারেই ঈদ কাটল সাঈদী-মামুনুলের

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২১, ১৬:৫৯ | আপডেট: ১৫ মে ২০২১, ১৮:৫৭

ইফতেখার রায়হান
গাজীপুর

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মামুনুল হকসহ হেফাজতের ৫০ নেতা। এছাড়া বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী, নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াও এই কারাগারে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারের ঈদে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বাইরে থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহের অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তাই ঈদ উপলক্ষে কারাগারের সরবরাহ করা বিশেষ খাবারেই তাদের এবারের ঈদ কেটেছে। অবশ্য প্রতি বছরই বন্দীদের জন্য ঈদে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। মানবিক বিবেচনায় ঈদের পরের দিন (শনিবারও) তাদের জন্য এ বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

ঈদের দিন শুক্রবার কারাগারের ভেতরে বন্দীদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঈদের ২২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গিয়াস উদ্দিন জানান, ৫০ জন হেফাজত নেতা ছাড়াও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াও কারাগারে বন্দি রয়েছেন।  

প্রতিবারের মতো এবারও বন্দীদের জন্য উন্নত খাবারের ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে সকালে পোলাও-পায়েশ-মুড়ি, দুপুরে মাংস, ডিম, মিষ্টি, শীতল পানীয় ও পান-সুপারি এবং রাতে সাদা ভাত, রুই মাছের মাথায় রান্না করা মুড়িঘণ্ট ও মাছ ভাজা।

জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন আরও জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের ৪২ নেতা, সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রায় দুই হাজার ৮০০ বন্দী রয়েছেন এ কারাগারে। ৫’শর মতো যাবজ্জীবন এবং এক হাজারের মতো ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে।

অন্যদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ১-এর অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছেন গিয়াস উদ্দিন। এই কারাগারে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও একই খাবারের ব্যবস্থা ছিল। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি সাবেক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদার হোসেন ও ডিআইজি প্রিজনস গোপাল বণিকসহ দেড় হাজারের মতো বন্দী এ কারাগারে রয়েছেন বলে তিনি জানান। তাদের মধ্যে ৬৮ জন ফাঁসির আসামি ও ৯০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ২-এর জেল সুপার আব্দুল জলিল জানান, এ কারাগারে ঈদের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাবারে একটু ভিন্নতা আছে ছিল এ কারাগারে। সকালে পায়েশ-মুড়ি, দুপুরে পোলাও, মাংস, শীতল পানীয়, মিষ্টি, পান-সুপারি, সালাদ এবং রাতে সাদা ভাত, মাছ এবং ঘিলা-কলিজা দিয়ে রান্না করা মুরগির লটপটি।
‘শিশু বক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানী, পুলিশের সাবেক উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) খান সাঈদ হাসান, নারয়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারিক সাঈদ, হল মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদসহ আড়াই হাজারের মতো বন্দী এ কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩৪ ফাঁসির আসামি, ৫৩৭ জন সশ্রম ও ৫২ জন বিনাশ্রম সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন জানান, এখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরী, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী ও নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াসহ সাত শতাধিক নারী বন্দী রয়েছেন। বিভিন্ন বন্দীর ৬৩ জন শিশুও রয়েছে। এই কারাগারে ২৭ জন ফাঁসির আসামি ও ৬৩ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এখানেও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, করোনা মহামারিকালে কারগারে বাইরে থেকে স্বজনদের আনা রান্না করা খাবার ও বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করা নিষিদ্ধ থাকলেও বন্দিরা টেলিফোনে তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলার সুযোগ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/এলএ)