নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুন

সাবেক এমপি পুত্র রনি কি কারাগারেই, জানুন বিস্তারিত...

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২১, ০৯:৪২

ঢাকার ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি এই মামলায় সাজা হওয়ার আগে থেকেই কারাগারে রনি। এরমধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে তার জামিনের চেষ্টা করা হলেও তা নাকচ হয়েছে উচ্চ আদালতে।

বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-টু তে আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ডিভিশন পেয়েছেন। তবে পরিবারের কারো সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ নেই। কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতেও আসেন না কেউ।

যে ঘটনায় সাজা: ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে নিউ ইস্কাটনে একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।

এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ২৪ মে মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে আসার এক সপ্তাহের মাথায় রনি ও তার গাড়িচালক গ্রেপ্তার হন। ওই রাতে সাংসদপুত্র রনির গাড়িতে আরও তিনজন ছিলেন । যদিও রনির অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল বলে জানা গেছে।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওইবছর ৩১ মে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে রনিকে আটক করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন। এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে অবস্থান করছেন।

জোড়া খুনের ওই ঘটনার মামলা হওয়ার তিন মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ২১ জুলাই রনিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও’ আসামি জানতেন যে তার গুলিতে কেউ হতাহত হতে পারে।

নিহতদের শরীরে পাওয়া গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট, রনির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবেদনসহ মোট ১৫টি আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৭ জনকে সাক্ষী করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

২০১৭ সালের ৬ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে জোড়া খুনের এ মামলায় রনির বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার।

রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির এবং ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। সাংসদপুত্রের গাড়ি চালক ইমরান ফকিরকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে সাক্ষী হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল।

কেন পিছিয়ে গিয়েছিল রায়: ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন রায়ের জন্য ২০১৮ সালের ৮ মে তারিখ ঠিক করে দেন। কিন্তু আসামিপক্ষের এক আবেদনে মামলাটি ফের বদলি করা হয় দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

নতুন আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ঈমাম ‘অধিকতর’ যুক্তিতর্ক শুনানির প্রয়োজন বোধ করায় রায় পিছিয়ে যায়। দুইপক্ষ আবার তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরে। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের জন্য ৪ অক্টোবর দিন রাখেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তাকে নতুন করে তলবের আবেদন করায় রায় আবার পিছিয়ে গিয়েছিল।

রনির বন্ধুদের জবানবন্দি: রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ ঢাকার হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে সাংসদপুত্রই সেদিন গুলি ছুড়েছিলেন। রনির পিস্তলের গুলিতেই ইয়াকুব ও হাকিমের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনার বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন রনির বন্ধু ইমরানও। জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, ‘ওই রাতে সোনারগাঁও হোটেল থেকে রনিকে নিয়ে মগবাজার মোড় হয়ে ইস্কাটনের বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। সেসময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তার একপাশ বন্ধ ছিল।’

‘আমাদের গাড়ির বাঁ দিকে ও পেছনে দুটি ট্রাক ছিল। রাস্তায় ছিল জ্যাম। জ্যামে আটকা থাকা অবস্থায় রনি সাহেব এক পর্যায়ে হাত বের করেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শোনা যায়।’

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/কেআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :